মানসম্মত সেবা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যখাতে সংস্কারের দাবি
দেশের স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত এবং দুর্নীতি কমাতে এই খাতের অর্থায়নে বড় ধরনের সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের দাবি, স্বাস্থ্যসেবায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের অর্থায়ন বাড়ানো এবং মানুষের পকেট থেকে খরচ কমার কথা থাকলেও বাস্তবতা উল্টো। দেশের সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালেই জরুরি বিভাগ দুর্বল। দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে এবং এ খাতে দুর্নীতি কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২১ মার্চ) স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত 'বাংলাদেশে ইউনিভারসাল হেলথ কাভারেজ অর্জনে সামাজিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা: সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব মতামত তুলে ধরেন।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক এবং সুইডেনের গোথেনবার্গ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর খান সোহেল।
বিজ্ঞাপন
বক্তব্যের শুরুতে ডা. জাহাঙ্গীর স্বাস্থ্য সেবা অর্থায়ন কৌশলপত্রে (২০১২-২০৩২) বর্ণিত প্রধান লক্ষ্যগুলো সম্পর্কে ধারণা দেন।
এসময় আসাদুল ইসলাম বলেন, অনেক কিছু আগে করা যায়নি বলে এখন বা ভবিষ্যতে করা যাবে না সেটি ভাবা ঠিক নয়। সরকারের সার্বিক নীতিনির্দেশনা হলো সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানো। ন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি হয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যসহ অনেক ধরনের সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে বলা হয়েছে।
তিনি স্বাস্থ্য সেবা অর্থায়ন কৌশলপত্র বাস্তবায়নে কয়েকটি প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে সরকারের অর্থায়নের সংস্কার করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন হলেও বাস্তবে মোট সরকারি ব্যয়ের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বরং কমেছে। বিদ্যমান আইনগুলোর সংশোধন করা এবং নতুন আইন প্রনয়ণ করা জরুরি থাকলেও এসব সংস্কারের সমর্থনে রাজনৈতিক নেতৃত্ব তেমন সোচ্চার নয়।
ড. রুমানা বলেন, স্বাস্থ্য সেবা অর্থায়ন কৌশলপত্র প্রণয়ন করার সময় শুধু জাতীয় পর্যায়েই নয়, জেলা পর্যায় থেকেও অনেকের মতামত নেওয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল সরকারের অর্থায়ন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে, মানুষের পকেট থেকে খরচ কমবে। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো। সুতরাং বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যৎ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। একটি কার্যকর রোডম্যাপ প্রস্তুত করার জন্য শুধু স্বাস্থ্য নয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়কেও একযোগে কাজ করতে হবে।
দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, টেকনিক্যালি আমরা অনেক কিছুই জানি বা অনেক কিছুই করতে পারি। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা খুবই দুর্বল। ইউনিভারসাল হেলথ কাভারেজ যেহেতু শুধু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তাই সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার মানসিকতা রাখতে হবে। তিনি একটি পরিসংখ্যান দেখান যে কাকতালীয়ভাবে দেশে ২০১২ সাল থেকে স্বাস্থ্য খাতে মানুষের খরচ বেশ দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে।
দেশের সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালেই জরুরি বিভাগ দুর্বল বলে মনে করেন ড. রুমানা। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে সরকারের নজর দেওয়া কতটা জরুরি তা করোনাকালেই বোঝা গেছে।
বক্তারা দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে এবং এ খাতে দুর্নীতি কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দক্ষ জনশক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করে এসব বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আবেদন জানান।
টিআই/জেডএস