১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে শপথ নেয় বাংলাদেশ সরকার। ওইদিনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সনদ ঘোষণা করে সরকার। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার প্রথমদিকের বৈঠকে মন্ত্রীদের দায়িত্ব বন্টনের পাশাপাশি কনের্ল ওসমানীকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

২ মে, ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ডা. তোফাজ্জল হোসেনকে (ডা. টি হোসেন) স্বাস্থ্য অধিফতরের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যা মন্ত্রিসভার কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত মস-১৮ তে লিপিবদ্ধ আছে।

মন্ত্রিসভার কার্যবিবরণী থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সেনাবাহিনীর পরে স্বাস্থ্য অধিদফতরই স্বাধীন বাংলাদেশের অধিদফতরগুলোর মধ্যে প্রথম প্রতিষ্ঠিত অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রথম মহাপরিচালক (ডা. টি হোসেন ১৯৭২)
ডা. টি হোসেন ১৯৪৮ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবি পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে এফআরসিএস এবং আমেরিকায় সার্জারিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে কুমুদিনী হাসপাতালে যোগদান করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকায় প্রথম ৩০ বেডের ‘নন-প্রফিট’ প্রাইভেট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত করেন; ক্লিনিকের যন্ত্রপাতিতে বিনিয়োগ করেন ১ লাখ ৪২ হাজার ডলার সমমানের টাকা।

মানবতাবাদী দার্শনিক এম এন রায়ের অনুসারী ডা. টি হোসেনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচয় ছাত্রাবস্থা থেকেই। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের পারিবারিক চিকিৎসক। মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দিন, সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ শীর্ষ রাজনীতিবিদরা সবাই তার ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা নিতেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি তার ক্লিনিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতাকে রোগী সাজিয়ে নিরাপদে রেখেছিলেন। ৪৫ জন কর্মচারীর জীবিকা নির্বাহ হতো তার ক্লিনিকে। নিজের হাতে গড়া ক্লিনিকের মায়া; এতগুলো মানুষের রুটিরুজি; অন্যদিকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থ দোটানা কাটিয়ে তিনি মনস্থির করেন যুদ্ধে যাবার।

এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতায় দেখা করেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার শ্রদ্ধামিশ্রিত সম্পর্কের কারণে সরকার গঠন ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বন্টনে তিনি কিছু ক্ষেত্রে উত্তেজনা প্রশমকের ভূমিকাও পালন করেন। মহাপরিচালক হিসেবে তার নিয়োগ সংবাদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রকাশিত হলে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকায় তার ক্লিনিক দখল করে সব যন্ত্রপাতি, ৫ হাজার বইয়ের লাইব্রেরি, গাড়ি, মূল্যবান চিত্রশিল্পসহ তার সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়।

শত্রুমুক্ত বাংলাদেশে ফিরে এসে তিনি কিছুই পাননি এবং এনিয়ে কোনদিন কোনকিছু চাননি বা কোনো সুবিধাও নেননি।

মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ক্রমবিকাশ ও কার্যক্রম
ডা. টি হোসেনের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদফরের যাত্রা শুরু হয় ওয়ান ম্যান আর্মির মতো। কলকাতার হাইকমিশন অফিসে অন্যান্য অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে গাদাগাদি করে বসে তিনি অধিদফতরের কাজ শুরু করেন। কোনো রকম আর্থিক বরাদ্দ ছাড়া।

শরণার্থী শিবিরে ব্যাপক স্বাস্থ্য সমস্যার মোকাবিলা করতে তিনি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আগত সব চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক্স, কম্পাউন্ডার ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের দৈনিক ভাতার ভিত্তিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। অর্থায়নের ব্যবস্থা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। পরের দিকে তিনি রেডক্রসের অর্থায়নে অন্যান্যদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধকালীন সরকারের বাজেট বরাদ্দ ছাড়াই প্রায় ২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় নিয়োজিত করতে পেরেছিলেন। উল্লেখ্য, চিকিৎসকের চাইতে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ছিল ৪ থেকে ১০ গুণ।

জনবলের পাশাপাশি তিনি ওষুধপত্র, স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি জোগাড় করেছেন ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে; রেডক্রসসহ ভারত ও পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুদান থেকে। শরণার্থী শিবিরের স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলার পাশাপাশি বিস্তৃত সীমান্ত এলাকা জুড়ে বিভিন্ন সেক্টরে সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় জনবল, ওষুধপত্র ও মেডিকেল সরঞ্জামাদি ও বিভিন্ন সাইজের ড্রেসিং স্টেশন স্থাপন।

মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের প্রত্যয়ন দেওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে, রণাঙ্গনের ২ নম্বর সেক্টরে এবং জোনাল কাউন্সিলে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োজিত করা। উদাহরণ হিসেবে- ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. মজিবুর রহমান ফকির, সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, পঞ্চম বর্ষের ছাত্র থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মহাপরিচালকের প্রত্যয়নপত্র বলে তিনি জেড ফোর্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। সেনাবাহিনীতে তাকে ক্যাপ্টেন মর্যাদা দেওয়া হতো।

২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসা-যুদ্ধের আইকন ‘বাংলাদেশ হাসপাতা’ স্থাপনে সহায়তা। এছাড়াও নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে আর্মি মেডিকেল কোর প্রতিষ্ঠা করা হয়; কনের্ল ডা. শামসুল হক মেডিকেল কোরের প্রথম ডিজি হিসেবে নিয়োজিত হন। জেনারেল (অব.) শামসুল হক পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অফিস ও জনবল
হাইকমিশন ভবনের পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪৫ প্রিন্সেপ স্ট্রিটে ত্রাণ ও পুনবাসন মন্ত্রীর চারতলায় স্থানান্তর করে হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আর রেডক্রস অফিস ছিল পাশাপাশি। দুই অফিসের বিভাজনে ছিল একটি চটের পর্দা!

জুলাই মাস নাগাদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনবল কাঠামো দাঁড়ায়-

• মহা পরিচালক: ডা. টি হোসেন
• উপ পরিচালক: ডা. কে এ জামান এবং ডা. আহমেদ আলী
• সহকারী পরিচালক: ডা. মো. ফরিদ এবং ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
• মেডিকেল অফিসার: ডা. মেসবাহুন নাহার এবং ডা. তাহেরা খাতুন
• বিতরন কর্মকর্তা: নাসিমা রহমান
• অফিস সহকারী: আকতার জাবিন আহমেদ

ওই কমর্কর্তাদের মধ্যে কেবল ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী আমাদের মাঝে আছেন, বাকিরা প্রয়াত বা দেশের বাইরে।

মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্যসচিব:
বাংলাদেশ সরকার মহাপরিচালককে সচিব পদমর্যাদায় বিবেচনা করলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়াতে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে মহাপরিচালক ডা. টি হোসেনকে মহাপরিচালকের দায়িত্বের সঙ্গে স্বাস্থ্যসচিবের দায়িত্বও অর্পণ করেন।

বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র চিকিৎসক যিনি যুগপৎ মহাপরিচালক এবং সচিব ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশের ৫০ বছরের অফিস ও জনবল তিনিই এযাবত একমাত্র স্বাস্থ্য সচিব- যিনি ডাক্তার!

স্বাস্থ্য সচিবের অফিস স্থানান্তর করা হয় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আবাসন কাম অফিস ভবনে। সেই ভবনের বারান্দাকে রূপান্তরিত করে তার অফিসের স্থান দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদের প্রতিবেদন:

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ একটি প্রতিবেদনে কেন ডা. টি হোসেনকে মহাপরিচালক নিয়োগ করা হয়েছিল তাঁর অফিসিয়াল ব্যাখ্যা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের একটি প্রতিবেদন পেশ করেন। তিনি লিখেছেন-

‘সরকার গঠনের সময় ডা. হোসেন আমাদের সহচর হিসেবে ছিলেন। পাক সেনাবাহিনীর সেই অভিযানের পরে দুই সপ্তাহের জন্যে আমাদের মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য তার ক্লিনিকে আশ্রয় নিয়েছিল। ঢাকায় প্রায় ছয় লাখ টাকা মূল্যমানের সরঞ্জামসহ তার নার্সিং হোম ফেলে তিনি এসেছিলেন। তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে আমাদের সহযোগিতা করতে এসেছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হতে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তার নার্সিং হোম থেকে আমরা সবাই চিকিৎসা নিতাম।

কলকাতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্রজীবনের প্রস্তুতির সময়কাল থেকেই তিনি তার রাজনৈতিক বন্ধু ছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চালু করতে চিকিৎসা পেশায় বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের মধ্যে একমাত্র ডা. হোসেনকেই পাওয়া গিয়েছিল।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদের প্রতিবেদন অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণাুলয়ের সাংগঠনিক পরিকল্পনা (অক্টোবর ১৯৭১):

১৯৭১ এর মধ্য জুলাইতে সরকারের সাংগঠনিক বিন্যাসকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগে রূপান্তর করা হয় যেখানে মহাপরিচারক ড. হোসেনকে সচিব হিসেবে এবং চারটি অধিদফতরের নাম প্রস্তাব করা হয়, সেগুলো হল: প্রতিরক্ষা মেডিক্যাল সার্ভিস, সিভিল মেডিক্যাল সার্ভিস, ওয়েলফেয়ার সার্ভিস এবং মেডিকেল শিক্ষা পরিদফতর।

১. প্রতিরক্ষা মেডিক্যাল সার্ভিস:

• তিনটি সেক্টরে আগামী তিন মাসে ব্যবহারের জন্য আমরা দশ লাখ টাকার ব্যবস্থা করেছি। আমরা প্রতিটি সাব-সেক্টরে একটি করে ডিস্পেন্সারি স্থাপন করতে যাচ্ছি।

• প্রতিটি সাব-সেক্টরে একটি ভ্রাম্যমাণ ইউনিট রাখা এবং ১০টি সেক্টরে অন্তত ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ১০টি এডিএস (অ্যাডভান্স ড্রেসিং স্টেশন) স্থাপনের চেষ্টা করছি। আমরা প্রথমবারের মতো ২নম্বর সেক্টরে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট বাংলাদেশ হাসপাতাল স্থাপন করেছি। প্রতিটি সেক্টরেই আমরা এইরকমের অন্তত একটি করে হাসপাতাল করবো।

• মুক্তিবাহিনীর আহত যোদ্ধাদের জন্য আমরা উপহার হিসেবে ৪টি কনভালেসেন্ট হোমস্ (দীর্ঘমেয়াদী নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র) পেয়েছি– এর মধ্যে একটি আগরতলায় ৪০ শয্যার; ১০ শয্যার একটি করে কেন্দ্র শিলঙ, তুরা এবং কোচবিহারে। পশ্চিম জোনের কোন এক স্থানে ৩০০ শয্যার এরকম একটি কেন্দ্র স্থাপনার পরিকল্পনা চলছে।

কনভালেসেন্ট হোমস- এর ধারণা থেকেই শত্রুমুক্ত বাংলাদশে ডা. আর জে গাস্টকে আমন্ত্রণ করা হয় – যার দীর্ঘমেয়াদী অবদান হিসেবে পঙ্গু হাসপাতাল ও পুনর্বাসন শিক্ষায়তন গড়ে উঠেছে অর্থপেডিক্স একটি বিশেষায়িত শাখা হিসেবে বাংলাদেশে বিকশিত হয়েছে। এর বীজ রোপিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই।

২. বেসামরিক মেডিকেল সাভির্স
আঞ্চলিক পরিষদ গঠনের সঙ্গে পূর্বাঞ্চল চিকিৎসা পরিষদের অধীনে আঞ্চলিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পেতে যাচ্ছে যা আমাদের সেই অঞ্চলের মূলত উদ্বাস্তু শিবির, যুব শিবির, ট্রানজিট শিবির এবং মুক্তাঞ্চলের জনগণের সমস্যার সমাধান করবে। মুক্তাঞ্চলে প্রয়োজনীয় ডাক্তার এবং ওষুধপত্রাদি আমাদের সরবরাহ করা উচিৎ। সামনের মাসগুলোতে আমাদের নিজস্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এবং স্বাগতিকদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দায়দায়িত্ব যতদূর সম্ভব আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য আমরা আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

৩. ওয়েলফেয়ার সার্ভিস
হাসপাতালে থাকাকালীন এবং দীর্ঘমেয়াদী আরোগ্য লাভ ও পুনর্বাসনের সময়ে আমাদের রোগীদের মঙ্গলসাধন করাই আমাদের কাজ। আমাদের রোগীরা সীমান্তবর্তী বেসামরিক এবং মিলিটারি হাসপাতালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যতদ্রুত সম্ভব আমরা প্রতিটি হাসপাতাল, এমনকি সম্ভব হলে প্রতি শিবিরেও একজন করে ওয়েলফেয়ার কর্মকর্তা নিয়োগ করতে চলেছি।

৪. চিকিৎসা শিক্ষার ছাত্র
বিভিন্ন মুক্তিবাহিনী এবং উদ্বাস্তু শিবিরে আমাদের যে সব মেডিকেল ছাত্ররা তাদের মূল্যবান সেবা দিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতি আমরা উদাসীন হতে পারি না। অধিকাংশ মেডিকেল ছাত্ররাই ছাত্রলীগের সদস্য এবং তাদের দেশপ্রেমের তাগিদে আমাদের সঙ্গে তারা চলে এসেছে। যদিও এই পর্যায়ে আমরা মেডিকেল শিক্ষা দিতে পারছি না, তবুও তাদের এবং জাতীয় স্বার্থ মাথায় রেখে সব মেডিকেল ছাত্রদের তথ্য সংগ্রহ করে ও সর্বোচ্চ উপায়ে তাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে মেডিক্যাল শিক্ষার জন্য একজন পরিচালক থাকা উচিৎ।

বিস্মৃতপ্রায় মুক্তিযুদ্ধের মেডিকেল যুদ্ধ
বাংলাদশের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ইতিহাস, সামরিক ইতিহাস নিয়ে চর্চা হয়েছে কিন্ত আমরা অনেকটাই বিস্মৃত হয়েছি যে মুক্তিযুদ্ধে স্বাস্থ্য সেক্টরের ছিল এক ব্যাপক ভূমিকা। অবিরাম আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা, অগনিত শরণার্থীদের চিকিৎসা, নিহত যোদ্ধাদের মৃতদেহ সৎকার, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এইসব ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলেছে একাত্তরের যুদ্ধের সময়। চিকিৎসা যুদ্ধ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।

আমাদের অনেকেরই জানা ছিল না যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২ মে, ১৯৭১ সালে। আমরা এটাও খেয়াল করিনি যে বাংলাদেশের প্রথম স্বাস্থ্য সচিব ছিলেন একজন ডাক্তার, এফআরসিএস। বঙ্গবন্ধুর বন্ধুত্বধন্য এই সার্জন জীবনের মোহ ত্যাগ করে পালন করেছেন স্বাস্থ্য খাতের প্রথম মহাপরিচালকের দায়িত্ব।

ল্যানসেট সাময়িকীর বিশেষ প্রকাশনা ২০১৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের অর্জনের অন্যতম নিয়ামক হল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

টিআই/এসএম