১৭৫ জন চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীকে ইফতার প্রদান করেছে এফডিএসআর/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ মহামারিতে চিকিৎসক-নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন জীবন বাজি রেখে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন, তখন ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক-নার্সরা দিন শেষে রোজা রেখে ইফতার নিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন। কেউ কেউ শুধুমাত্র পানি খেয়েই ইফতার সম্পন্ন করছেন।

তারা বলছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্মরত চিকিৎসক নার্সদের জন্য ইফতারের কোনো ব্যবস্থা না করা এবং হাসপাতালটিতে কোনো ক্যান্টিন না থাকায় সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্ভোগের সময় শেষ হয় এসেছে। বেসরকারিভাবেই চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটিতে কর্মরত এক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথম কয়েকটি রোজায় ইফতার নিয়ে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সরাসরি করোনা রোগীদের সংস্পর্শে এসে কাজ করায় ইফতার কিনতে বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না আমাদের। ফলে আমাদের অনেককেই শুধুমাত্র পানি খেয়েই ইফতার শেষ করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা শুরুতে ভেবেছিলাম হাসপাতাল থেকেই ইফতারের ব্যবস্থা করা হবে। ফলে বাসায় থেকেও নিয়ে আসা হয়নি। আর পরবর্তীতে বাসা থেকে আনলেও দীর্ঘক্ষণ ব্যাগে আবদ্ধ অবস্থায় থাকার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কেউ কেউ ইফতারও করতে পারে না। একেবারে বাসায় গিয়ে রোজা ভাঙে।

আরেক চিকিৎসক জানান, নতুন হাসপাতাল হিসেবে অনেক বিষয়েই চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের কষ্ট করতে হচ্ছে। আমাদের তো শুধু এখানে এনে কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একজন ক্যাডার অফিসার হিসেবে নূন্যতম যে সুযোগসুবিধাগুলো প্রাপ্য তার আংশিকও আমরা পাই না।

এই প্রসঙ্গে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টা নিয়ে আমরা ভাবছি। যেহেতু ইফতার বা আলাদা খরচ বাবদ আমাদের জন্য সরকারিভাবে আর্থিক কোনো ব্যবস্থাপনা নেই, যে জন্য আমি চাইলেও পারছিলাম না। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইতিমধ্যেই অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথেও কথা বলেছি। আশা করছি এই সংকট আর থাকছে না। দুর্ভোগের সময় শেষ হয়ে এসেছে।

তিনি বলেন, শুরুতে আমি আমার মতোই চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু ইফতার বাবদ প্রতিদিনই তো একটা অংকের টাকা ব্যয় হবে, সেটা সরকারিভাবে না দিলে তো আমি ব্যবস্থা করতে পারছিলাম না। ওই সামর্থ্যটা আমার নেই।

নাসির উদ্দিন বলেন, হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য একটা বরাদ্দ আছে। তারা তিনবেলা খাবার পান। কিন্তু চিকিৎসক বা কর্মচারীদের জন্য এরকম কোনো বরাদ্দ থাকে না। যেখান থেকে আমি ব্যয় করে দেখাতে পারি যে এটা আমার স্বাস্থ্যকর্মীদের ইফতার বাবদ ব্যায় হয়েছে।

১৭৫ স্বাস্থ্যকর্মীর পাশে ইফতার নিয়ে এফডিএসআর

ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের এই ইফতার দুর্ভোগে পাশে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসেবলিটিস (এফডিএসআর)। বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) ১৭৫ জন চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীকে ইফতার প্রদান করেছে তারা।

এ সময় এফডিএসআরের পক্ষ থেকে মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন, কোষাধ্যক্ষ ডা. ফরহাদ মঞ্জুর, কার্যকরী কমিটির সদস্য ডা. পারিসা জামিল তপ এবং মডারেটর ডা. অসিত মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

এই প্রসঙ্গে সংগঠনটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি হাসপাতাল থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের ইফতার দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে হাসপাতালটিতে কোনো ক্যান্টিনও নাই। তারা খাবারের অনেক কষ্ট করছে। তাই আমরা আজ তাদের জন্য সামান্য কিছু ইফতারের ব্যবস্থা করেছি।

তিনি বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় কেবল সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে না। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকেও এগিয়ে আসতে হবে। সবাই মিলেই আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী হবে।

টিআই/এইচকে