দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আরও দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নতুন করে অক্সিজেন উৎপাদনে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। 

বৃহস্পতিবার (৬ মে) দুপুরে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় করণীয় এবং অক্সিজেন সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এ কথা জানান। 

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান দুটি দৈনিক ৭০ টন করে অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারবে। বর্তমানে প্রতিদিন আমাদের লিকুইড অক্সিজেন উৎপাদনের সক্ষমতা আছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টন। নতুন দুই প্রতিষ্ঠান থেকে যদি আরও ৭০ টন যুক্ত হয়, তাহলে আমাদের সক্ষমতা গিয়ে দাঁড়াবে ২৭০ টনে। যা আমাদের জন্য অনেক বড় শক্তি হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, দেশে বড় তিন-চারটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে যারা সব মিলিয়ে ১৭৫ টনের মতো লিকুইড অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। এছাড়াও আমাদের গ্যাস অক্সিজেন তৈরির সক্ষমতাও অনেক আছে। সরকারিভাবে আমাদের প্রায় ২২ হাজার সিলিন্ডার গ্যাস মজুদ আছে। লিকুইড অক্সিজেন ও গ্যাস অক্সিজেন মিলিয়ে আমাদের প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২১০ টন অক্সিজেন তৈরির সক্ষমতা আছে।

আরও পড়ুন : অবাধ শপিংয়ের প্রভাব ১৬ মের পর দেখতে পারব

তিনি বলেন, আগামী মাসে (জুন) আরও একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৪০ টন লিকুইড অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারবে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। এছাড়াও জুলাই মাসে আরও ২৫ টন অক্সিজেন উৎপাদন করবে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান। যেগুলো উৎপাদনে আছে সেগুলো যদি আমরা হিসেব করি, তাহলে দেখা যায় আমাদের কাছে প্রতিনিয়ত ২০০-২১০ টন অক্সিজেন আসে। একইসঙ্গে যদি আরও ৭০ টন যুক্ত হয়, তাহলে সেটা ২৭০ টন হয়ে যাবে। ফলে অক্সিজেন নিয়ে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে না। তবে সংক্রমণ যদি আবারও বাড়ে, তাহলে তো কিছু করার নেই। সংকট তৈরি হতেই পারে।

মন্ত্রী বলেন, প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবে আমাদের ৫০ থেকে ৬০ টন অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে ২০০ বা ২১০ টনে দাঁড়ায়। যে কারণে কয়েকটা দিন আমাদের সংকট গেছে।  সেই সময় ভারতও তাদের দেশ থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বর্তমানে আমাদের অবস্থা ভালো। সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। 

তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের মালিক যারা রয়েছেন,তাদের পরামর্শ দেবো আপনারা আপাতত লিকুইড অক্সিজেন কম ব্যবহার করেন। লিকুইড অক্সিজেন ব্যবহার না করে গ্যাস অক্সিজেন ব্যবহার করবেন। লিকুইড অক্সিজেন জমিয়ে রাখবেন প্রয়োজন হলে যেন ব্যবহার করা যায়। 

আরও পড়ুন : দ্বিতীয় ডোজের ১৪ লাখ টিকার ঘাটতি

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৯০০ টন অক্সিজেন আমাদের মজুদ রয়েছে। এটা আমাদের একটা শক্তি। এছাড়াও আমরা অক্সিজেন জেনারেটর অর্ডার করেছি, যাতে আমরা নিজেরাই অক্সিজেন তৈরি করতে পারি। অক্সিজেন স্টোর করার জন্য সক্ষমতা বাড়াতে বলেছি। এটা আমরা করব। আমরা সরকারিভাবে আরও ১ হাজার টন অক্সিজেন মজুদ করব। তার জন্য একটু সময় লাগবে। এখন পর্যন্ত আমাদের যে মজুদ আছে তাতে বর্তমানে আমাদের চলে যাবে। কিন্তু সংক্রমণ যদি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় তখন আমাদের সংকট বেড়ে যাবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা বারবার ভুল করতে চাই না। আমরা শিখতে চাই। আমরা জানি জীবন হলো সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। মানুষের জীবনের জন্য অর্থনীতি প্রয়োজন আছে, তবে জীবন ছাড়া তো অর্থনীতি চলবে না। যদি জীবন না থাকে, তাহলে অর্থনীতির কি প্রয়োজন হবে? তাই আমরা নিজেরা সতর্ক হই, নিজেদের জীবন রক্ষা করি। পরিবারকেও সুরক্ষিত রাখি।

অনুষ্ঠানে বিপিএমসিএ সভাপতি এম এ মুবিন খানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞাসহ আরও অনেকে।

টিআই/এসকেডি