বিনা পারিশ্রমিকে কিডনি প্রতিস্থাপন
২০০০তম অস্ত্রোপচারে নতুন মাইলফলক ডা. কামরুল ইসলামের
বিনা পারিশ্রমিকে দুই হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছেছেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। গতকাল (মঙ্গলবার) রাজধানীর শ্যামলীতে তার প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালে সফলভাবে এই ২ হাজারতম অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।
দেশে এ পর্যন্ত যত কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকই সম্পন্ন হয়েছে প্রচারবিমুখ এই চিকিৎসকের একক নেতৃত্বে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে অধ্যাপক কামরুল ইসলাম নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রতি সপ্তাহে গড়ে পাঁচটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা এই মানবিক চিকিৎসক মূলত নিজের প্রতিষ্ঠিত সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালেই নিয়মিত অস্ত্রোপচার করেন।
বিজ্ঞাপন
দুই হাজার অস্ত্রোপচারের এই মাইলফলক স্পর্শ করলেও অধ্যাপক কামরুল ইসলামের মধ্যে নেই কোনো বাড়তি উচ্ছ্বাস। নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশের গরিব রোগীদের জন্য আরও বড় পরিসরে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করাই আমার মূল লক্ষ্য। আমাদের উদ্দেশ্য ব্যবসা করা নয়, বরং সেবার মান বজায় রেখে যত বেশি সম্ভব রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা।’
পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মতো উন্নত চিকিৎসা কাঠামো বাংলাদেশেও গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে এ পর্যন্ত হওয়া কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রায় ৫০ শতাংশই তার সরাসরি নেতৃত্বে হয়েছে, যা তাকে দেশের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রমের প্রধান স্তম্ভে পরিণত করেছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এই অস্ত্রোপচারে কোনো সার্জন ফি নেওয়া হয় না। রোগীর কাছ থেকে শুধু ওষুধ, অ্যানেস্থেশিয়া, ল্যাব টেস্টসহ আনুষঙ্গিক খরচ নেওয়া হয়, যার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দুই লাখ টাকা। এছাড়া অস্ত্রোপচার পরবর্তী ফলোআপ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও রোগীদের আলাদা কোনো খরচ দিতে হয় না।
অধ্যাপক কামরুল ইসলামের সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশের বেশি। মূলত আর্থিক সামর্থ্যহীন রোগীরাই তার কাছে অগ্রাধিকার পান।
১৯৬৫ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে জন্ম নেওয়া কামরুল ইসলাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পান। ১৯৯০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে স্বর্ণপদকসহ এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি এফসিপিএস, এমএস (ইউরোলজি) এবং ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ থেকে এফআরসিএস ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৭ সাল থেকে তিনি নিয়মিত কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু করেন।
মানবিক চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালে তিনি ‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করেন। এছাড়া কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট গবেষণার জন্য ইউরোলজি সোসাইটি স্বর্ণপদকসহ একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং প্রতি ঘণ্টায় ৫ জন রোগী এর কারণে মারা যান। ডায়ালাইসিসের উচ্চ ব্যয় ও প্রতিস্থাপন সেবার সীমাবদ্ধতার কারণে অধিকাংশ রোগীই চিকিৎসা পান না। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত ও সঠিক চিকিৎসা কাঠামো নিশ্চিত করা গেলে কিডনি অকেজো হয়ে মৃত্যুর হার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব।
টিআই/বিআরইউ