ধাতব ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করেছে ইরান: আইএইএ
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় কাজ করছেন এক বিজ্ঞানী/ ছবি: সংগৃহীত
তেহরান ও ছয় বিশ্ব শক্তির মধ্যকার স্বাক্ষরিত চুক্তির লঙ্ঘন করে ধাতব ইউরেনিয়াম উৎপাদনের কাজ শুরু করেছে ইরান। দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় ইস্পাহানের পরমাণু স্থাপনায় এ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। পরমাণু সমঝোতায় কে আগে ফিরবে তা নিয়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে মানসিক লড়াই চলছে, ঠিক তখনই এ তথ্য সামনে আনলো সংস্থাটি।
আইএইএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তেহরানের গবেষণা চুল্লির জ্বালানীর প্রয়োজন মেটানোর জন্য ইরান ধাতব ইউরেনিয়াম উৎপাদনের কাজ শুরু করেছে। আইএইএ’র মহাসচিব রাফায়েল গ্রোসি এ তথ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলোকে জানিয়েছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
গ্রোসি বলেছেন, ইরানের ইস্পাহান পরমাণু স্থাপনায় ৩.৬ গ্রাম ধাতব ইউরেনিয়াম তৈরি করা হয়েছে বলে গত ৮ ফেব্রুয়ারি নিশ্চিত হন তারা।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত বুধবার আইএইএ’তে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজেম ঘারিব আবাদি জানিয়েছিলেন, তেহরানের গবেষণা চুল্লির জন্য উন্নত জ্বালানী উৎপাদনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, তিন ধাপের এ কাজের প্রথম ধাপে প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামকে ধাতব ইউরেনিয়ামের রূপান্তর করা হবে। এ কাজ করতে সক্ষম হলে নয়া পরমাণু জ্বালানী উৎপাদনকারী দেশগুলোর কাতারে ইরানের নাম যুক্ত হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, পুরো বিষয়টিকে আগেই আইএইএ’কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের পরিদর্শকদের উপস্থিতিতেই এ কাজ করা হবে।
২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যত নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
তবে ওই পরমাণু সমঝোতার ভিত্তিতে সেসময় ইরান সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সম্মত হয় এবং এর বিনিময়ে তেহরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দেয় পরাশক্তি দেশগুলো। ওই সমঝোতা সই করার আগ পর্যন্ত ইরান তার তেহরান চুল্লির জন্য ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে আসছিল। সমঝোতায় পশ্চিমা দেশগুলো তেহরান চুল্লির জন্য ২০ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ইরানের বাইরে থেকে সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কিন্তু ২০১৮ সালে আমেরিকা এই সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর তেহরান চুল্লির জন্য জ্বালানী আসা বন্ধ হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তেহরানও ধীরে ধীরে ওই সমঝোতায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে এবং সম্প্রতি ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে শুরু করে। আর এবার ধাতব ইউরেনিয়াম উৎপাদনের খবর সামনে এলো।
ইরান অবশ্য বরাবরই দাবি করে থাকে যে, তাদের পামাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। এর বাইরে পরমাণু প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বিভিন্ন সময়ে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো, মজুত করা ইউরোনিয়াম পরিশোধন করে এর গুণগত মান বাড়ানোসহ বিভিন্ন সংবাদ নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
টিএম