চীনে বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজের সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বেইজিং। বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দেশটির টেলিভিশন ও রেডিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি।

একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের তথ্য গোপন ও দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর জিন পিং প্রশাসনের অত্যাচারের রিপোর্ট প্রকাশ করায় বিবিসি’র তীব্র সমালোচনাও করেছে চীন। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশের এই সিদ্ধান্তকে ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছে বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা বিশ্বে মূলত ইংরেজি ভাষায় সংবাদ প্রচার করা বিবিসি কেবল চীনের আন্তর্জাতিক হোটেল ও কিছু কূটনৈতিক এলাকায় সম্প্রচারিত হতো। অর্থ্যাৎ চীনের সাধারণ মানুষ আগে থেকেই বিবিসি দেখার সুযোগ পেতেন না।

যুক্তরাজ্যে চীনা গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের (সিজিটিএন) লাইসেন্স বাতিলের এক সপ্তাহের মাথায় চীনের পক্ষ থেকে বিবিসির ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। নিজ দেশে বিবিসির সম্প্রচার নিষিদ্ধের বিষয়ে চীনের দাবি, বিবিসি ‘খবরের সত্যতা ও নিরপেক্ষতা’ এবং ‘চীনের জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর নয়’ সম্প্রচারের এই নীতিমালাগুলো ‘গুরুতরভাবে লঙ্ঘন’ করেছে।

অবশ্য চীনের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে এক বিবৃতিতে বিবিসি জানিয়েছে, ‘চীনের এই সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ। বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সারা বিশ্ব থেকে ন্যায্য ও নিরপেক্ষভাবে কোনো ভয় বা পক্ষপাতিত্ব না করে বিবিসি সংবাদ প্রচার করে।’

অন্যদিকে চীনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে অগ্রহণযোগ্যভাবে সংকুচিত করছে বেইজিং। এছাড়া বিবিসি সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। একইসঙ্গে বেইজিংয়ের এই সিদ্ধান্তকে দেশটিতে স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অব্যাহত চাপের অংশ বলেও মন্তব্য করেছে ওয়াশিংটন।

সম্প্রতি জিনজিয়াংয়ে মুসলিম নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। জিনজিয়াং রাজ্যের বন্দিশিবিরে ছিলেন এমন মানুষ ও ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দি নারীদের পরিকল্পিতভাবে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিষয়টি তারা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এর প্রমাণ দেখেছেন।

বেইজিং অবশ্য বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। চীন সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, মুসলিমদের মধ্যে চরমপন্থা ও বিচ্ছিন্নতাবাদ ঠেকাতে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব মানুষকে ‘সুপথে’ ফেরানোর কাজ করছে তারা।

বিবিসির প্রতিবেদন নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে চলতি মাসের শুরুতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েবিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কোন প্রমাণ ছাড়াই এটা করা হয়েছে। বিবিসি যেসব মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে সেসব মানুষ মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। এর আগেও এমন কাজ করেছে তারা।’ 

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবশ্য জিনজিয়াং নিয়ে চীনের দাবি কখনোই মেনে নেয়নি। জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীন ‘গণহত্যা চালাচ্ছে’ বলেও দাবি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে রেখেছে ওয়াশিংটন।

সূত্র: বিবিসি

টিএম