সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আরও কঠোর সাজা চান সু চি সমর্থকরা
ইয়াঙ্গুনে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ থেকে সু চির মুক্তি ও গণতান্ত্রিক সরকার ফেরানোর দাবি উঠেছে | ছবি: এএফপি
মিয়ানমারের নতুন সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির সমর্থকরা। গত ছয়দিন ধরে দেশটিতে গণতন্ত্রপন্থীদের টানা বিক্ষোভের পর যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দফার নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিলেও তাতে সন্তুষ্ট নন তারা।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ও গত নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডির জয়কে স্বীকৃতি দিতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জায়ান্ট ফেসবুক বলেছে, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী পরিচালিত বিভিন্ন পেইজ ও প্রোফাইল থেকে প্রচার করা কন্টেন্টের বিস্তার কমিয়ে দেয়া হবে।
ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে সামরিক বাহিনী সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো অব্যাহত রাখায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মিয়ানমারের সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ফেসবুকের কাছে কনটেন্ট মুছে ফেলার অনুরোধ পাঠানোর ক্ষমতাও স্থগিত করবে।
বিজ্ঞাপন
ওয়াশিংটন প্রথম দফার নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনপ্রণেতারা ওই অঞ্চলের দেশগুলোকেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটেন বলছে, অং সান সু চির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুতকারী ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ভাবছে তারা।
সু চির ২৯ বছর বয়সী সমর্থক মোয়ে থাল বলেন, ‘মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে আমরা প্রত্যেক দিন ও রাতে ভোগান্তি পােহাচ্ছি। যে কারণে আমরা এর চেয়ে আরও বেশি পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।’
তিনি বলেন, আমরা এটি দ্রুত শেষ করতে চাই। মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং জেনারেলদের বিরুদ্ধে সম্ভবত আরও কঠোর শাস্তি ও পদক্ষেপ আমাদের দরকার।
গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং এনএলডির ২৬০ জনের বেশি জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীকে আটক করে দেশটির সামরিক বাহিনী। সামরিক জান্তা সরকারের বিরোধিতায় মিয়ানমারের লাখ লাখ মানুষ টানা ছয়দিন ধরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করছেন। ২০০৭ সালের জাফরান বিপ্লবের পর এত বড় বিক্ষোভ এর আগে মিয়ানমারে দেখা যায়নি- বলছে রয়টার্স।
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে সেনাবাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে দেশটির রাজধানী নেইপিদো, বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন।
দেশটির সেনাবাহিনী বিক্ষোভ দমনে বড় শহরগুলোতে জনসমাগম নিষিদ্ধ এবং কিছু কিছু শহরে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে। তবে সরকারের কঠোর বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে দেশটির বেশ কিছু শহরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
২৩ হাজার কারাবন্দির মুক্তি
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লেইং শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে দেশটির বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ২৩ হাজার জনকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমার নতুন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করছে। দেশের শান্তি, উন্নয়ন ও শৃঙ্খলার স্বার্থে এবং জনগণকে সন্তুষ্ট ও বন্দিদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।
দেশটির ২৩ হাজার ৩১৪ জন নাগরিক এবং ৫৫ জন বিদেশির সাজা মওকুফ করা হয়েছে।
মিয়ানমারে মানবিক ও সহানুভূতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে এই সাজা মওকুফ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এসএস