বিশ্বব্যাপী টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাস মহামারি চললেও একমাত্র উত্তর কোরিয়াই ছিল ‘করোনা মুক্ত’ দেশ। তবে সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে দেশটি। অবশ্য কিছুদিন না যেতেই এবং স্পষ্ট কোনো প্রমাণ সামনে না এনেই পিয়ংইয়ংয়ের দাবি, করোনা মোকাবিলায় তারা উন্নতি করছে।

তবে কিম জং উনের দেশের এই দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। স্বাধীন ও স্পষ্ট কোনো তথ্যের অনুপস্থিতির মধ্যে সংস্থাটির বিশ্বাস, উত্তর কোরিয়ার করোনা পরিস্থিতি ভালো নয়, সম্ভবত আরও খারাপ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে দেশটিতে প্রতিদিন জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩ লাখ ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গেলেও করোনা সংক্রমণের ঢেউ বর্তমানে হ্রাস পেয়েছে। অবশ্য সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ঠিক কতজন লোক করোনা পজিটিভ হয়েছেন তা কখনোই সরাসরি জানায়নি পিয়ংইয়ং।

আর তাই সরকার-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে পরিস্থিতির মাত্রা মূল্যায়ন করা কঠিন করে তুলেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির জন্য ব্যাপকভাবে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে বাকি বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন এই দেশটির কোভিড পরীক্ষার সক্ষমতার অভাব রয়েছে। এমনকি উদ্বেগ রয়েছে দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এবং ভ্যাকসিনের অভাব নিয়েও।

এই পরিস্থিতিতে বুধবার এক ভিডিও ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের প্রধান মাইকেল রায়ান বলেন, ‘আমরা মনে করি উত্তর কোরিয়ার করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, ভালো নয়।’

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত পরিসংখ্যানের বাইরে করোনা সংক্রান্ত আরও তথ্য জানার বিশেষ কোনো সুবিধায় প্রবেশাধিকার ডব্লিউএইচও’র নেই।

রায়ান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত প্রকৃত তথ্যে প্রবেশাধিকার পেতে এবং দেশটির প্রকৃত পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তব সমস্যা রয়েছে। আর তাই এখনকার তুলনায় দেশটির আরও ভালো একটি চিত্র হাতে পেতে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মতো প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাজ করছে ডব্লিউএইচও।’

তিনি বলেন, ডব্লিউএইচও করোনা টিকা ও সরবরাহ-সহ একাধিক বিষয়ে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এই প্রস্তাবের জবাবে পিয়ংইয়ংয়ের উত্তর কী, সেটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

অবশ্য এর আগেও করোনা সংক্রমণ ও মহামারি মোকাবিলায় পিয়ংইয়ংকে করোনা টিকা পাঠিয়ে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য ওয়াশিংটনের সেই প্রস্তাবে কোনো সাড়া দেয়নি কিম জং উনের এই দেশটি। গত মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই এই তথ্য সামনে এনেছিলেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, দেশব্যাপী চলমান লকডাউনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও ৯৬ হাজার ৬১০ জন নতুন করে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।

অবশ্য এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নতুন করে কোনো মৃত্যু হয়েছে কি না তা উল্লেখ করেনি গণমাধ্যমটি।

টিএম