নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন, শর্ত মানবো: জারিফ
যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে ‘তাৎক্ষনিকভাবে’ কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন বা জ্যাকোপা পরমাণু চুক্তির শর্ত মেনে চলা শুরু করবে ইরান। শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এক টুইটবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের ফোনালাপের পর পরমাণু চুক্তি নিয়ে তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এমন তথ্যই জানিয়েছেন স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার।
বিজ্ঞাপন
বাইডেন প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শুক্রবার এক টুইটবার্তায় জাভেদ জারিফ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই চুক্তিতে ফিরতে চায়, ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করে, তাহলে ইরানও তাৎক্ষনিভাবে চুক্তিতে ফিরবে।’
‘আমাদের বক্তব্য খুবই সোজা এবং স্পষ্ট – নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন, (চুক্তির) সব শর্ত মানতে প্রস্তুত আছি আমরা।’
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে দেশটির সরকার।
‘কিন্তু প্রথমে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) চুক্তিতে ফিরতে হবে। এরপর ২০১৫ সালের চুক্তির কাঠামো অনুযায়ী এর শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা চলতে পারে।’— বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি- পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের প্রতিরক্ষা দর্শনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমাদের বক্তব্য একদম পরিষ্কার— নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সে জায়গায় কূটনীতিকে স্থাপন করুন।’
ইরানকে পরমাণু প্রকল্প থেকে বিরত রাখতে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়া- জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এই ছয় স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ২০১৫ সলে পরমাণু চুক্তি বা জ্যাকোপা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
চুক্তির শর্ত ছিল - ইরান ধীরে ধীরে পরমাণু প্রকল্প থেকে সরে আসবে- এর পরিবর্তে দেশটির বিরুদ্ধে যেসব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে- সেগুলোও পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে‘, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান এবং ইরানের ওপর নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়ে ইরান প্রশ্নে কঠোর নীতি নেওয়া ট্রাম্পের কারণে চুক্তিটি নিয়ে অচলবস্থার তৈরি হয়। ইরান তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর চুক্তিটি জিইয়ে রাখতে নড়েচড়ে বসেছে ইইউ।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসন যখন এই চুক্তি করে তখন ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলানো জো বাইডেন গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ইউরোপ আশা করছে তিনি এই চুক্তিতে ফিরবেন।
বাইডেন অবশ্য ক্ষমতা গ্রহণের পর ইরানের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, তিনি এই চুক্তিতে আবার যোগ দেওয়ার চেষ্টা করবেন; কিন্তু তার আগে ইরানকে পরমাণু বিষয়ক কিছু সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।
সূত্র: রয়টার্স
এসএমডব্লিউ