দলীয় কোন্দলে নাজেহাল নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শার্মা ওলি সংখ্যালঘু সরকারে পরিণত হওয়ার ভয়ে সম্প্রতি পার্লামেন্ট ভেঙে আগাম নির্বাচনের ডাক দেন। মঙ্গলবার তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ওলির এক উপদেষ্টা বুধবার বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করছেন না; যা করার পার্লামেন্ট করবে।    

গত ডিসেম্বর থেকে নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। ওলি আচমকা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের ডাক দেওয়া পর এই অস্থিরতার শুরু। সরকারি নীতি প্রণয়নে দলে তার বিরোধী পক্ষ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ তুলে তখন তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। 

আদালত তার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেওয়ার পর দলের মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন ৬৯ বছর বয়সী ওলি।

সুপ্রিম কোর্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক অভিহিত করে আগামী ৮ মার্চের আগে অধিবেশন ডাকার নির্দেশ দেওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন দেশটির ৬৯ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী কেপি শার্মা ওলি। 

ওলির উপদেষ্টা সুরিয়া থাপা বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এখন পদত্যাগ করবেন না। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনো সুযোগই নেই। তিনি পার্লামেন্টের মুখোমুখি হবেন।‘ তবে সুরিয়া এর কোনো ব্যাখ্যা দেননি।  

আদালতের রায় উদযাপন করে কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশ করেছেন

এদিকে ওলিবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। আদালতের রায় উদযাপন করে কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশ করেছেন। তাদের হাতে ছিল লাল ও সাদা পতাকা। কমিউনিস্টদের হাতুড়িও এ সময় তাদের হাতে দেখা যায়। রাজধানীর রাস্তায় সমাবেশ করে তারা প্রধানমন্ত্রী কে পি শার্মা ওলিকে পদত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছেন। 

কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে লড়াই আসন্ন এবং এই অনিশ্চয়তা আগামী আরও কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে।

কমিউনিস্ট পার্টির রঙে মুখ রাঙানো ২৫ বছরের বিক্ষোভকারী পুর্ণা খাদকা প্রধানমন্ত্রীর কে পি শার্মা ওলির নিজ জেলার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ওলির এখনো ব্যাগ গুছিয়ে বালকোটের (ওলির বাড়ি) পথ ধরা উচিত।’   

নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির ওলিবিরোধী অংশটি বলছে, তারা একনায়কতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিচালনার নীতি প্রত্যাখান করে আসছেন। তার (ওলির) সরকার চালানোর সক্ষমতা যে নেই তা আদালতের রায়ে স্পষ্ট।

গত কয়েক মাসে নেপালজুড়ে ওলিবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজনের দায়িত্বে থাকা কমিউনিস্ট পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা নারায়ণ কাজি শ্রেষ্ঠা বলছেন, ওলিবিরোধী আইনপ্রণেতারা পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালের কমিউনিস্ট নেতাদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে লড়াই আসন্ন এবং এই অনিশ্চয়তা আগামী আরও কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে।

কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কৃষ্ণা পোখারেল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হওয়ার মধ্য দিয়ে নেপালের এই রাজনৈতিক অস্থিরতার সমাপ্তি ঘটবে।’

এএস