যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পর এবার উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে চীনের উপর চাপ তৈরি করল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিভাগের প্রধান জোসেপ বরেল স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায়, জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদল চীনের জিনজিয়াং রাজ্যে গিয়ে উইঘুর মুসলিমদের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে আসুক।  

জাতিসংঘে মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট। বহুদিন ধরেই তিনি একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে চীনে যেতে চাইছেন। দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে চীন ঠিক কী ব্যবহার করছে, তা দেখে একটি রিপোর্ট তৈরি করতে চাইছেন ব্যাশেলেট ; কিন্তু চীন এখন পর্যন্ত তাতে সম্মত হয়নি।

মঙ্গলবার বরেল বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় , মিশেলের নেতৃত্বে একটি দল জিনজিয়াং প্রদেশে যাক। চীনের উচিত উইঘুর অধ্যুষিত জিনজিয়াং প্রদেশে জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তকারী দলকে ঢুকতে দেয়া । সেখানে কী চলছে, তা খতিয়ে দেখা ও বিশ্ববাসীর সামনে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তুলে ধরতে জাতিসংঘকে চীনের সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

আগের দিন সোমবারই কানাডার পার্লামেন্টে চীন এবং উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে সেখানে বলা হয়েছে, চীন 'গণহত্যা' চালাচ্ছে। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তার মন্ত্রিসভা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’ও একই কথা বলেছিলেন। তিনিই প্রথম চীনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে বলেছিলেন, উইঘুর মুসলিমদের গণহত্যা করছে চীন। তার এই বক্তব্যের জেরে পম্পেও এবং বেশ কয়েকজন মার্কিন প্রশাসনিক কর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার।

মানবাধিকার সংগঠনগুলির বক্তব্য, চীন জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় দশ লাখ উইঘুর মুসলিমকে একটি ক্যাম্পে বন্দি করে রেখেছে। তাদের ধর্মের অধিকার, সন্তান উৎপাদনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে কার্যত দাসের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এই অভিযোগগুলি চীন কখনোই মানতে চায়নি।

তবে চীন না মানলেও জিনজিয়াংয়ের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া উইঘুররা ভয়াবহ অত্যাচারের কথা বলেছেন। সমস্যা হলো, এখনো পর্যন্ত ওই অঞ্চলে কোনো সংগঠনকে যেতে দেয়নি চীন; ফলে জিনজিয়াঙে আসলে কী ঘটছে তা এখনও বিশ্বাবাসীর কাছে অস্পষ্ট।

বিবিসির এক অনুসন্ধানে উইঘুরদের জোরপূর্বক শ্রমিক হিসেবে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ক্যাম্পের রক্ষী ও কর্মকর্তারা উইঘুর নারীদের নিয়মিত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করছেন বলেও উঠে আসে ওই অনুসন্ধানে। চীনের সরকার অবশ্য এই প্রতিবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিবিসির ওই প্রতিবেদন ‘মনগড়া’ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে লেখা।

সম্প্রতি উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতেও একটি পিটিশন জমা পড়েছিল। কিন্তু বিচারপতিরা সেই আবেদন গ্রহণ করেননি। না করার কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছিলেন, চীন যেহেতু আদালতে আসবে না, ফলে বিষয়টির বিচার করা সম্ভব নয়।

সূত্র: ডিডব্লিউ

এসএমডব্লিউ