গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করছে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভরত মানুষের ওপর দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হ্লেইংসহ স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের (এসএসি) আরও পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিনে অং সান সু চির সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাতের পর সামরিক বাহিনী ওই প্লাটফর্মটি প্রতিষ্ঠা করে। যুক্তরাজ্যের সর্বশেষ এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে এসএসি’র সকল সদস্যই নিষেধাজ্ঞার আওতায় এলো।

ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীসংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না দেশটির কোম্পানিগুলো। একইসঙ্গে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক সামগ্রিকভাবে খতিয়ে দেখতেও চলমান বাণিজ্যবিষয়ক সকল প্রমোশন স্থগিত করেছে দেশটি।

এদিকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আজকের এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে স্পষ্টভাবে এই বার্তা পৌঁছাবে যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত সকলকে জবাবদিহিতা করতে হবে। একইসঙ্গে মিয়ানমারের জনগণের ভোটে নির্বাচিত নেতৃত্বের হাতেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে দেশটির লাখ লাখ মানুষ সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। অভ্যুত্থানবিরোধীদের এই বিক্ষোভ দেশটির বড় বড় শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান এই বিক্ষোভে দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু, লেখক-কবি এবং পরিবহন শ্রমিকরাও যোগ দিয়েছেন। তারা সেনাশাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশটির নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি এবং অন্যান্যদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি তুলেছেন।

এরপর থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন শুরু করে জান্তা সরকার। সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের ছোড়া গুলিতে দু’জন নিহত হয়। এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরও এক তরুণী।

এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোয়ে মিন্ট তুন ও জেনারেল মং মং কিয়াও নামে দু’জন জেনারেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তারা উভয়েই স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের (এসএসি) সদস্য। নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এই দুই সেনা কর্মকর্তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে কোনো মার্কিন কোম্পানি বা নাগরিকের এই দুই জেনারেলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনও নিষিদ্ধ করা হয়।

সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিদেশী সম্পদ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক দপ্তর জানায়, গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলিবর্ষণ এবং দুই বিক্ষোভকারীকে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

পরে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছিলেন, ‘সহিংসতা উস্কে দেওয়া এবং মানুষের মতামতকে জোরপূর্বক দমনের চেষ্টা করা সামরিক কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার লক্ষ্যে আজকের (নিষেধাজ্ঞার) সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।’

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম