মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের হত্যায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করলেও রাস্তায় অবস্থান করছিলেন অনেকে
সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত মানুষের ওপর সরাসরি গুলি চালিয়ে ১৮ জনকে হত্যার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর দেশজুড়ে চলা এই বিক্ষোভে রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সর্বাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
— UN Spokesperson (@UN_Spokesperson) February 28, 2021
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা ও গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজেরিক বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের দমনে মারণাস্ত্রের ব্যবহার এবং নির্বিচারে আটকের ঘটনা অগ্রহণযোগ্য।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ‘দমনপীড়ন বন্ধ এবং ভোটের রায় মেনে নেওয়ার মাধ্যমে মিয়ানমারের মানুষের মতামতকে সম্মান দিতে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রিত হয়ে বার্মিজ সামরিক বাহিনীকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।’
— Josep Borrell Fontelles (@JosepBorrellF) February 28, 2021
এদিকে মিয়ানমারে চলমান ঘটনাবলীর ব্যাপারে খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সামরিক কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে জনগণকে সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে।’
বিজ্ঞাপন
এর আগেই অবশ্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে একমত হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। একইসঙ্গে দেশটিতে আপাতত কোনো উন্নয়ন সহযোগিতা না দেওয়ার বিষয়েও একমত হয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে আন্দোলনরত মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে ১৮ জনকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। এই ঘটনাকে বার্মার মানুষের ওপর বার্মিজ নিরাপত্তা বাহিনীর জঘন্য সহিংসতা বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বার্মার সাহসী মানুষের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে সবাইকে একই সুরে মিয়ানমারের মানুষের মতামতের পক্ষে কথা বলতে আহ্বান জানাচ্ছি আমি।’
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের সঙ্গে জড়িত থাকায় গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর আরও দু’জন জেনারেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন করে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ওই দুই সেনা কর্মকর্তার নাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোয়ে মিন্ট তুন ও জেনারেল মং মং কিয়াও। তারা উভয়েই স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের (এসএসি) সদস্য। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিনে অং সান সু চির সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাতের পর সামরিক বাহিনী ওই প্লাটফর্মটি প্রতিষ্ঠা করে।
সেসময় আলজাজিরা জানায়, নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোয়ে মিন্ট তুন ও জেনারেল মং মং কিয়াওয়ের সম্পদ জব্দ করা হবে। একইসঙ্গে কোনো মার্কিন কোম্পানি বা নাগরিকের এই দুই জেনারেলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, ‘সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও দমনপীড়ন বন্ধ করতে হবে এবং গণতন্ত্রকে অবশ্যই পুনর্বহাল করতে হবে।’ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে সমন্বয় করে সামরিক অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে অস্ত্র ব্যবহারে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কড়া নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। রোববার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। আর তাই শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্বহালে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’
সূত্র: আলজাজিরা
টিএম