ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের ‘কোদাখাকি দুর্গাপুজা’ ঘিরে অদ্ভূত এক রীতি রয়েছে।  ৫১৯ বছর ধরে  মুসলিম পরিবারের দেওয়া ভোগ বা কোনো দান প্রথমে দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। তারপর অন্যরা ভোগ ও পুজার দানসামগ্রী উৎসর্গ করতে পারেন দেবীকে। 

এ প্রথা চালুর পেছনে রয়েছে এক জনশ্রুতি- প্রায় ৬০০ বছর আগে মুসলিম সম্প্রদায়ের এক সদস্যকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন দেবী। আজও সে নিয়মে ছেদ পড়েনি। দুর্গাপুজার বোধনের আগের দিন দেবীর দর্শন পান কোনো না কোনো মুসলিম পরিবারের সদস্য।  

স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল আলমও সে কথাই বলছেন। তিনি বলছেন, ‘অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি। ৫১৯ বছর ধরে এ পুজোর বোধনের ঠিক আগের দিন দেবীকে স্বপ্নে দর্শন পায় এলাকার কোনও না কোনও মুসলিম পরিবার।’ 

আরও পড়ুন : শারদীয় দুর্গোৎসব : সম্প্রীতির উৎসব 

এ পূজার নামকরণ নিয়েও লোকগাথা রয়েছে। কথিত রয়েছে, এক মহালয়ায় প্রবল বর্ষণে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ওই এলাকায়। বিঘার পর বিঘা ধানের জমি ডুবে গিয়েছিল। সে রাতেই এক মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, ভুরুর (কাউন) চালের ভোগ দিয়ে পুজা করতে হবে। সঙ্গে থাকবে কাঁঠাল, ডাঁটা এবং গঙ্গার ইলিশ মাছ। প্রসঙ্গত, ভুরুর আরেক নাম কাউন। তবে প্রাচীনকালে একে কোদা বলেও ডাকা হতো। কোদার চালে দেবীর ভোগ দেওয়া হয় বলে এই দুর্গা ‘কোদাখাকি’ নামে পরিচিত।  

কলকাতার আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চলতি বছর স্বপ্নাদেশ পেয়ে ঢাকা থেকে কাউনের চাল নিয়ে ওই পূজায় গেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের এক সদস্য। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের পূজার এখনও কিছু রেওয়াজ রয়েছে। বোধনের সময় বলি দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হয়। প্রতি দিন ছাগ বলি দেওয়া হয়। ভোগে কাউনের চাল আবশ্যিক। সন্ধ্যায় কোনো আরতি হয় না। প্রদীপের শিখা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ঘুরলে সন্ধিপুজা শুরু হয়। 

এনএফ