বাঁ থেকে যথাক্রমে আরমিন ল্যাশেট, আঙ্গেলা মেরকেল ও মার্কুস স্যোডার

জার্মানিতে নির্বাচন আসন্ন। বিদায় নিচ্ছেন অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। মেরকেলের পর কে হবেন জার্মানির চ্যান্সেলর? এর অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে মেরকেল-পরবর্তী জার্মানির পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ভাবনা। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডয়েচে ভেলে। 

সেপ্টেম্বরে জার্মানির নির্বাচন। কে জয় পাবেন, কে হবেন মেরকেলের উত্তরসূরি? তা জানতে এখনও বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে আপাতত এটুকু বলা যায় যে, সম্ভাবনার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন আরমিন ল্যাশেট এবং মার্কুস স্যোডার।

জার্মানির সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার মুখ্যমন্ত্রী ল্যাশেট সম্প্রতি মেরকেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। দলের প্রধান হওয়ার পর থেকে দেশের চ্যান্সেলর হিসেবে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরার চেষ্টা জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

গত ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘মানুষ এমন একজনকে চ্যান্সেলর হিসেবে দেখতে চায়, যার পররাষ্ট্র এবং অভ্যন্তরীণ নীতিতে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে।’

ল্যাশেটকে জবাব দিতে একটুও দেরি করেননি জার্মানির অন্যতম বড় রাজ্য বাভারিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোর্ডার। স্যোর্ডার শুধু বাভারিয়ার মুখ্যমন্ত্রী নন, সিডিইউ-এর সহযোগী দল সিএসইউ-এর প্রধানও তিনি।

ল্যাশেট চ্যান্সেলর প্রার্থী হিসেবে নিজের যোগ্যতা ইঙ্গিতে তুলে ধরার পরই সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে তার এক টেলিফোন আলাপচারিতার কথা। দীর্ঘ ৪৫ মিনিটের সেই কথোপকথনে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল বিষয়ক প্রকল্প গুরুত্ব পেয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মেরকেলের সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে জার্মানি। নতুন চ্যান্সেলরের সময়ে জার্মানি সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারবে কি-না এ প্রশ্ন মেরকেল-যুগ অবসানের আগেই বড় হয়ে উঠেছে।

হালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইয়োহানেস ফারভিক অবশ্য ডয়েচে ভেলেকে বলেছেন, মেরকেল দেড় দশক চ্যান্সেলর থাকার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং তার বাইরে জার্মানির একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন। সুতরাং নতুন কাউকে সেই পর্যায়ে যেতে সময় দিতে হবে।

ল্যাশেট আর স্যোর্ডারের পররাষ্ট্রনীতি

ল্যাশেটের জন্ম বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস সীমান্ত সংলগ্ন আখেন শহরে। ইউরোপীয় নীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি স্যোর্ডারের চেয়ে এগিয়ে। তিনি মহামারিতেও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত খোলা রাখার চেষ্টা করেছেন। 

অধ্যাপক ফারভিক বলছেন, ল্যাশেটের তুলনায় স্যোর্ডারের পররাষ্ট্র ভাবনা অনেকটাই অজ্ঞাত। অপরদিকে তবে জার্মানিরে বার্লিনকেন্দ্রিক থিংকট্যাংক গ্লোবাল পাবলিক পলিসি ইন্সটিটিউটের পরিচালক থরস্টেন বেনার মনে করেন, ইউরোপীয় প্রকল্পের সঙ্গে স্যোর্ডারের সম্পৃক্ততা অতি নগণ্য৷

তবে মোটাদাগে দুজনই ইউরোপীয় ঐক্য ও মর্যাদা ধরে রাখার পক্ষে সদা সোচ্চার। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান ছিল জার্মানির প্রথম সারির এই দুই নেতার। দুজনই মনে করতেন ট্রাম্পের কারণে ‘স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের ভূমি’ যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা ল্যাশেট বা স্যোডার যিনিই চ্যান্সেলর হোন না চীনের সঙ্গে সম্পর্ক একই থাকবে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নরম নীতি?

মেরকেলের বিদায়ের পর ক্রেমলিনের বিষয়ে বার্লিনের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে তা সময়ই বলতে পারবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের দুটি বিষয় একটা দিকনির্দেশনা দিতে পারে। রাশিয়ার বিরোধীনেতা নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার পর কঠে্ার ভাষায় ক্রেমলিনের নিন্দা জানিয়েছিলেন ল্যাশেট। 

সমালোচনা স্যোডারও করেছেন। তবে অতীতে ল্যাশেট সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকার যেমন প্রশংসা করেছেন, সে রকম বক্তব্য স্যোডারের মুখে কখনো শোনা যায়নি।

২০১৪ সালে ল্যাশেট ‘শুরুতে যখন রাশিয়া সবাইকে জিহাদিদের বিষয়ে সতর্ক করেছিল, তখন অনেক জার্মান বিষয়টিকে প্রোপাগান্ডা বলে উড়িয়ে দিয়েছিল’ বলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসাই করেছিলেন।

এএস