নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ বলে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে ইরান

সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে পরমাণু সমঝোতা সামনে এগিয়ে নিতে তেহরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারই একমাত্র উপায় বলে জানিয়েছে ইরান। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সায়িদ আব্বাস আরাকচি বুধবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় গ্রিসের পররাষ্ট্র সচিব সামিস্টুক্লিস দিমিত্রিসের সঙ্গে এক ভিডিও কলে এ মন্তব্য করেন।

ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরমাণু সমঝোতা পুনরায় সক্রিয় করতে বিদ্যমান কূটনৈতিক সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে পশ্চিমা দেশগুলোকে। তার দাবি, এমন কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করা যাবে না, যার ফলে এই সুযোগটুকুও হাতছাড়া হয়ে যায়।

আরাকচি বলেন, পরমাণু সমঝোতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমেরিকাকে তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। ওয়াশিংটন সেটা করলে তেহরানও নিজের প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়নে ফিরে যাবে।

ভিডিও কলে গ্রিসের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ইউরোপ সব সময় আমেরিকার পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিপক্ষে ছিল। এছাড়া ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ইরান ও ছয় বিশ্ব শক্তির পরমাণু সমঝোতার প্রতি গ্রিসের সমর্থন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এর আগে পরমাণু সমঝোতা কার্যকর করতে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব করলেও তা বাতিল করে দেয় তেহরান। তবে ইরানের এই সিদ্ধান্তে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, এটা দুঃখজনক; বৈঠকে ইরানের উপস্থিতি প্রত্যাশিত ছিল।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পাঁচ বিশ্ব পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে।

এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি সমঝোতায় টিকে থাকলেও চুক্তি মেনে চলার ক্ষেত্রে এসব দেশের ঢিলেঢালা মনোভাব ছিল লক্ষ্য করার মতো।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের বিদায় এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের দায়িত্ব নেওয়ার পর পরমাণু চুক্তিতে আবারও ফেরার ব্যাপারে আগ্রহী হয় ওয়াশিংটন ও তেহরান। তবে চুক্তিতে কে আগে ফিরবে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক মতবিরোধ চলছে।

টিএম