ইসরায়েলে দুই বছরে চতুর্থবার নির্বাচন
বিরোধী নেতা বেনি গান্তেজ এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু
২০২১ সালের মার্চে আবারও নির্বাচন হবে ইসরায়েলে। মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বাজেট পাসে ব্যর্থ হওয়ার পর দেশটির পার্লামেন্ট নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেয়।
২০১৯ সালের এপ্রিলের পর থেকে ইসরায়েলে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রতিবার দেশটির কোনও দলই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্থাৎ সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনে জয় পায়নি।
বিজ্ঞাপন
তিনটি নির্বাচন হলেও এককভাবে সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়ে গত মে মাসে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গান্তেজের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তি করে জোট সরকার গড়েন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
দুই প্রধান দলের তিন বছরের চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ১৮ মাস নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। আর ২০২১ সালের নভেম্বরে ১৮ মাসের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন বেনি গান্তেজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই জোটও টিকল না।
বিজ্ঞাপন
এদিকে জোট ভাঙ্গনের কারণ হিসেবে জানা গেছে, বেনি গান্তেজ গান্তেজ একসঙ্গে দুই বছরের (২০২০ ও ২০২১ সালের) বাজেট পাসের কথা দাবি করেছিলেন। কিন্তু নেতানিয়াহু ২০২১ সালের বাজেট পাসে অস্বীকৃতি জানান।
ফলে মঙ্গলবার মধ্যরাতে এই জোট ভেঙে যায়। আগামী ২৩ মার্চ আবারও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার এক টিভি সাক্ষাতকারে নেতানিয়াহু বলেন, যদি আরেকটি নির্বাচন আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমরাই জয়ী হবো। এ সময় তিনি গান্তেজকে পুনর্নিবাচনের জন্য দায়ী করেন।
এদিকে বেনি গান্তেজ জানান, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতির মামলা বন্ধ করার আইন পাস করতে চান পার্লামেন্টে। তিনি টুইট বার্তায় জানান, নেতানিয়াহু আমাদের আরও একটি নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন; যাতে করে তাকে আদালতে যেতে না হয়।
নেতানিয়াহু ইসরায়েলের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলমান। ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে দায়ের মামলার বিচার শুরু হবে। তবে বারবার অবশ্য তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
করোনা প্রতিরোধে নেতানিয়াহুর পদক্ষেপ নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে মানুষের। ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি। এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় না থাকাতে এবারের নির্বাচন নিয়ে বেশ চাপেও আছেন নেতানিয়াহু।
প্রথমবার ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ৭১ বছর বয়সী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ সাল থেকে তিনি দেশটির সরকারপ্রধানের ক্ষমতায় রয়েছেন।
আগামী মার্চের জন্য নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর কথা জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েলের বাসিন্দাদের জন্য লাখ লাখ কোভিড-১৯ টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকরণের চুক্তির ব্যাপক প্রশংসা করেন।
জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রিউভেন হাজান বলেন, ট্রাম্পের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন নেতানিয়াহু। ফলে গত নির্বাচনে তিনি গোঁড়া ইসরায়েলিদের সমর্থন পান। কিন্তু জানুয়ারিতে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসলে নেতানিয়াহু একজন যোগ্য প্রচারককে হারাবেন।
এবারের নির্বাচনে প্রভাবশালী কট্টরপন্থী নেতা গিদিওন সার নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি ছেড়ে নতুন দল নিউ হোপ পার্টি গড়ে তুলেছেন। তার এই নতুন দল নেতানিয়াহুকে বেকায়দায় ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে গান্তেজের রাজনৈতিক অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়েছে। নেতানিয়াহুর সাথে জোট গঠনের পর তার ব্লু এন্ড হোয়াইট পার্টি ভেঙে যায়। নির্বাচনে তিনি অল্প কয়েকটি আসন ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এবারের নির্বাচনে মধ্য বামপন্থী দলগুলোর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিনের প্রশ্নে ইসরায়েলের সঙ্গে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয় তার ওপরেই মূলত এটা নির্ভর করবে।
সূত্র: রয়টার্স ও আল জাজিরা
ওএফ/এএস