নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পরিবারের সদস্যদের কথা শোনেন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দপ্তরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন ভেদান্ত প্যাটেল এ তথ্য জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

গত বুধবার সকালে রাজধানী শাহীনবাগে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাসার বাইরে একদল লোক তাকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন। পরে নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তায় সেখান থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

পরে শাহীনবাগের ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরিভিত্তিতে বৈঠক করেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সেখানে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান।

এ বিষয়টি গত বুধবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিংয়ে সামনে আনেন মুশফিকুল ফজল নামের এক সাংবাদিক। সেখানে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আজ সকালে ভুক্তভোগী সাজেদুল ইসলামের পরিবারকে দেখতে যাওয়ার সময় সরকার সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েছেন। এরপর তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছুটে যান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে উদ্বেগের কথা জানান। রাষ্ট্রদূতদের ওপর এটা দ্বিতীয় কোনও হামলার ঘটনা। ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট প্রথম হামলা হয়েছিল তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের ওপর। একই সরকারের সমর্থকেরা সেই হামলা করেছিল। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ কীভাবে সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত এবং সরকারপন্থি লোকদের হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছে? তাহলে এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপমুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল (ফাইল ছবি)

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপমুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত হিসেবে মানবাধিকারের প্রতি সম্মানকে স্বীকৃতি দেয়। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রধান উপাদান হিসাবে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা মানবাধিকারের প্রসঙ্গ তুলি। এছাড়া স্বাধীন গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ নষ্ট করে এমন বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি ইস্যুগুলো তুলে ধরা হয়।

পিটার হাসের ঘটনা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, ‘নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের কর্মীরা গত ১৪ ডিসেম্বর একটি সভা আগেভাগেই শেষ করেছেন। এবং এই বিষয়ে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানিয়েছি।’

উল্লেখ্য, পিটার হাস গত বুধবার শাহীনবাগে যে বাসায় গিয়েছিলেন, সেই বাসার সাজেদুল ইসলাম ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তার পরিবারের অভিযোগ, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে গেছে।

এছাড়া সাজেদুল ইসলামের বোন সানজিদা ইসলাম গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী।

বিবিসি জানিয়েছে, গত বুধবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যখন সেখানে যান তখন বাইরে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেকটি সংগঠন। তিনি যখন সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা তাকে ঘিরে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করে।

এই সংগঠনটির সঙ্গে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আছে বলে মনে করা হয়।

টিএম