গত বছর ডিসেম্বর মাসে প্রতিদিনই বেড়েছে বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গড় হিসেবে গত ডিসেম্বরে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দুই শ’ কোটিতে ঠেকেছে - যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ।

প্রত্যাশার তুলনায় বেশি হওয়া এই প্রবৃদ্ধি কোম্পানিটি নিয়ে নতুন আশার সঞ্চার করতে সাহায্য করেছে; কারণ সম্প্রতি ব্যয় বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞাপন খাত থেকে আয় কমে যাওয়ায় চাপে ছিল ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা।

ফেসবুকরে প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ২০২৩ সালকে ‘দক্ষতার বছর’ হিসাবে ঘোষণা করার পর মূল কোম্পানি মেটা-এর শেয়ারের দাম বাজারের মূল বাণিজ্য ঘণ্টা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও পরবর্তীতে ১৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

জাকারবার্গ সম্প্রতি কোম্পানির এক বৈঠকে বলেন, প্রতিষ্ঠান ব্যয় কমানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

‘আমরা এখন একটি ভিন্ন পরিবেশে আছি,’ তিনি ফার্মের মুনাফার দিকে ইঙ্গিত করেন, যা ২০২২ সালে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কমেছে। এর আগে কয়েক বছর ধরে ফার্মটির মুনাফার প্রবৃদ্ধির হার দুই অংকের ঘরেই ছিল।

‘আমরা মনে করি না যে এটি এভাবে চলতে থাকবে, তবে আমি এটাও মনে করি না যে এটি আগে যেমন ছিল সেই অবস্থায় ফিরে যাবে।"

মেটা, যা ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপেরও মালিক এই কোম্পানিটি গত বছর একটি বড় পুনর্গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল। যার মধ্যে ছিল অফিসের জায়গা কমিয়ে আনা এবং ১১ হাজার চাকরি বা প্রায় ১৩% কর্মী ছাটাই করা ছিল।

মেটার কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব পদক্ষেপের কারণে গত বছর ৪.৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছিল যা কোম্পানির মুনাফার উপর প্রভাব ফেলায় তা অর্ধেকে নেমে আসে। তারপরও সেই বছর ২৩.২ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছিল মেটা।

জাকারবার্গ বলেন, ‘২০২২ সাল একটি চ্যালেঞ্জিং বছর ছিল। কিন্তু আমি মনে করি বছরের শেষের দিকে আমাদের ভালো অগ্রগতি হয়েছে।’

ডিসেম্বর থেকে আগের তিন মাসে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ফেসবুকের আয় ছিল ৩২.২ বিলিয়ন ডলার যা এর আগের বছরের তুলনায় ৪% কম। তবে মুনাফার এই পরিমাণ অনেক বিশ্লেষকের প্রত্যাশার চেয়ে ভাল ছিল।

মেটা গত বছর এর বিনিয়োগকারীদের হুশিয়ার করেছিল এবং ইতিহাসে প্রথমবার দৈনিক ফেসবুক ব্যবহারকারীদের হার কমছে বলে পোস্ট করেছিল। একই সাথে ইঙ্গিত করেছিল যে তারা মেটাভার্স নামে পরিচিত ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উপর বিনিয়োগে জোর দেবে।

কিন্তু ডিসেম্বরে, প্রতিদিন সাইটে ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক বছর আগের তুলনায় ৪% বেড়েছে, এমনকি ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায়ও বেড়েছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

মেটার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের গোটা বছরে প্রতিদিন ফেসবুকসহ তাদের সব ধরণের অ্যাপে সক্রিয় মানুষের সংখ্যা সংখ্যা বছরে ৫% বেড়েছে।

জাকারবার্গ অবশ্য বলেছেন, ফেসবুক তার ভিডিও পণ্য— অর্থাৎ রিলের মাধ্যমে অগ্রগতি করছে। এই ফিচারটির উপর জোর দেয়া হয়েছে কারণ এটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি টিকটকের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখোমুখি হয়েছে যা বিশেষ করে তরুণ ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করেছে।

বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির খরচ কমানো এবং আগামী মাসগুলোতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বিক্রয়ের পূর্বাভাসকে লুফে নিয়েছে এবং ইতোমধ্যে মেটার শেয়ারের হস্তান্তর বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এর কারণে শেয়ারের হস্তান্তর বেড়েছে।

জাকারবার্গ জানিয়েছেন, মেটা নিজেদের শেয়ার কেনার জন্য অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। গত বছর যার দাম কোম্পানির লক্ষ্য নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সন্দেহের কারণে ব্যাপকভাবে পড়ে যায়।