সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেছেন, পাঁচ বছর আগের তুলনায় চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি বর্তমানে অনেক বেশি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বৈশ্বিক দুই পরাশক্তির এই সংঘাতের আশঙ্কা করেছেন তিনি। রোববার বিবিসি এই বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে।

তবে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সংঘাত এখনই ঘটবে না বলে মনে করেন সিঙ্গাপুরের এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, উভয় দেশ যদি অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কঠোর পন্থা অবলম্বন করে, তাহলে তারা অনায়াসেই নিজেদের একটি অচলাবস্থায় খুঁজে পেতে পারে।

গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। দুই দেশের বাণিজ্য যুদ্ধ ও সর্বশেষ করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপের কারণে এই উত্তেজনা আরও চরম আকার ধারণ করে। এর মাঝেই আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের উচ্চ-পর্যায়ের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

চীনকে পরামর্শ দিতে নারাজ সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি। তবে সিঙ্গাপুরের রাজনৈতিক নির্দেশনা বিশ্বের বড় এবং ছোট দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা উসকে দেয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজের টকিং বিজনেস এশিয়া প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে লি বলেন, চীন কোন পথে চলছে এবং এই পথ তাদের জন্য ভালো হবে কি না; তা নিয়ে প্রচুর অনিশ্চয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি না যে, এটি চীনের স্বার্থে রয়েছে।

ক্ষুদে এই দ্বীপ রাষ্ট্র বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় চীন-মার্কিন সম্পর্কের ব্যাপারে প্রায়ই সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর মতামত জানতে চায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম।

নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার এবং বৃহত্তম বিনিয়োগকারীও যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে, এশিয়ার অন্যান্য অনেক দেশের মতো সিঙ্গাপুরের বৃহত্তম রফতানি বাজার চীনে রয়েছে। চীনের উত্থানে অর্থনৈতিকভাবে ফুলে ফেঁপে ওঠে সিঙ্গাপুরও।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ

গত দুই বছরে বিশ্বের অন্যতম প্রধান দুই পরাশক্তির তিক্ত বাণিজ্য যুদ্ধ এই নাজুক ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এর শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আসার পর। তবে নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের ব্যাপারে যে নরম কোনও নীতি নেবেন তারও কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

লি বলেন, তিনি আশা করেছিলেন— যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট এমন একজন হবেন; যিনি বহুপাক্ষিকতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশ্বাস করবেন।

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আধিপত্যের লড়াইয়ের ব্যাপারেও কথা বলেছেন সিঙ্গাপুরের এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‌‘যুক্তরাষ্ট্র এখনও এক নম্বর। কিন্তু দ্বিতীয় নম্বরও (চীন) খুব বেশি দূরে নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি মেনে নেওয়া কঠিন।’

বেশ কিছু পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে চীন। অতীতে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল তার অন্তত পাঁচ বছর আগেই মার্কিন অর্থনীতিকে পেছনে ফেলতে যাচ্ছে বেইজিং।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে চীনের অর্থনীতির অস্বাভাবিক উত্থান ঘটেছে।

সূত্র: বিবিসি।

এসএস