তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ায় সর্বশেষ সভায় ‘বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দেওয়ার’ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা নির্বাচনের আচরণবিধিমালা লঙ্ঘন করেছে কিনা—খতিয়ে দেখবে ভারতের নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।

পাশাপাশি, সোম এবং মঙ্গলবার পুরুলিয়ার যেসব এলাকায় সভা করেছেন মমতা, সেখানকার জনসভার বক্তৃতা কোনও ভাবে বিকৃত না করে কমিশনকে দিতে হবে বলেও জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন।

নন্দীগ্রামে আহত হওয়ার পর সোমবার থেকে ফের জেলা সফরে বেরিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি এবং বলরামপুরে জনসভা করেন তিনি। বাঘমুণ্ডির সভাতেই বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

জনসভায় মমতা বলেন, তার সরকার এমনিতেই সবাইকে বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে। ২০২১ সালে ক্ষমতায় এলে আর রেশনের দোকানে গিয়ে চাল-ডাল সংগ্রহ করতে হবে না সাধারণ মানুষকে; বরং তাদের দোরগোড়ায় সবকিছু পৌঁছে দেবে সরকার।

মঙ্গলবার শালতোড়া বিধানসভা এলাকার জনসভা থেকেও বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তৃণমূল সূত্রে খবর, বুধবার দলের ইশতেহার প্রকাশ করা হবে। সেখানে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের উল্লেখ রয়েছে। জেলা সফরে সে কথারই বলেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়; কিন্তু বিষয়টি যে কমিশনের নজর এড়ায়নি, তা বোঝা গেল সেদিন বিকেল গড়াতেই।

এ নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ঝামেলা’ পোহাতে হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর মতে, এখনও মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কথায়, ‘পদে থেকে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে কোনও প্রকল্পের কথা ঘোষণা করতে পারেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়।’

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। সেদিন থেকেই রাজ্যে আদর্শ আচরণ বিধি চালু হয়ে গেছে। সেই অনুযায়ী, ভোটপর্ব চলাকালে নতুন প্রকল্প ঘোষণার অনুমতি নেই রাজ্য সরকারের।

বিশ্বনাথের মতে, কমিশন যদি মমতার কথায় বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করে, সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। দিনের অর্ধেক সময়ের জন্য তার প্রচারের উপর বসানো হতে পারে নিষেধাজ্ঞা। আবার শুধুমাত্র সতর্কও করেও বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে পারে নির্বাচন কমিশন।

তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর এবং তার আগে, একাধিক বার রাজ্যে প্রচারে এসে একাধিক প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গেছে বিজেপি নেতাদের। রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে ষাটোর্ধ্ব কীর্তন শিল্পীরা পেনশন পাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তা নিয়ে কৈলাসের বিরুদ্ধে কমিশনের দ্বারস্থও হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ফিরহাদ হাকিম।

এছাড়া, সোমবার পুরুলিয়ায় মমতার সভার দিন বাঁকুড়ার রানিবাঁধে প্রচারে গিয়ে আদিবাসীদের ঘরে শংসাপত্র পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে সপ্তম বেতন কমিশন চালু হবে, শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। আদিবাসী মানুষের হাতে নগত ১৮ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেন।

মঙ্গলবার আবার বাঁকুড়ায় গিয়ে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা প্রতিশ্রুতি দেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্যের মাহিষ্য-তিলিদের সংরক্ষণের আওতায় আনা হবে।

তবে বিশ্বনাথের মতে- কৈলাস, শাহ, নড্ডা, তারা কেউই রাজ্যের ক্ষমতাসীন সরকারের অংশ নন। তাই তাদের ক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণবিধি খাটে না।

সূত্র: আনন্দবাজার

এসএমডব্লিউ