মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধীদের বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতার অবসানের আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী উগ্রপন্থী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সংগঠন দ্য স্টেট সংঘ মহানায়ক কমিটি। গত মাসের অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির নিরাপরাধ সাধারণ জনগণের ওপর সশস্ত্র সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন চালানোর অভিযোগও করেছে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের এই সংগঠন।   

গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক বাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের সরাসরি নিন্দা জানিয়েছে দ্য স্টেট সংঘ মহানায়ক কমিটি। সংগঠনটি সরকারের সঙ্গে নিজেদের কার্যক্রম স্থগিত করার চিন্তা-ভাবনা করছে বলেও এক খসড়া বিবৃতিতে জানিয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ বলছে, বৃহস্পতিবার দেশটির ধর্ম কল্যাণবিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবে দ্য স্টেট সংঘ মহানায়ক কমিটি। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা একটি চূড়ান্ত বিবৃতি প্রকাশ করবে সংগঠনটি।

মিয়ানমারে সরকারের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ইতিহাস রয়েছে সন্ন্যাসীদের। ২০০৭ সালের জান্তাবিরোধী জাফরান বিপ্লবের সময়ও দেশটির সন্ন্যাসীরা সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ওই বিপ্লব দেশটিতে গণতন্ত্রের যাত্রা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের এই সংগঠনের সেব্যাপারে জানতে যোগাযোগ দ্য স্টট সংঘ মহানায়ক কমিটির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসা এই সংগঠনটি ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে নতুন করে বিবাদ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত করে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে গৃহবন্দি করে রেখেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই দেশটিতে ব্যাপক অস্থিরতা চলছে। অভ্যুত্থানের বিরোধীতায় লাখ লাখ মানুষ প্রায় প্রতিদিন বিক্ষোভ করছে।

দেশটির সামরিক জান্তা সরকার বিক্ষোভ দমাতে কঠোর পন্থা বেছে নেওয়ায় এখন পর্যন্ত ১৮০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীর প্রাণহানি ঘটেছে। বুধবারও দেশটির বিভিন্ন শহরে অনেক মানুষ জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন।

রয়টার্স বলছে, দেশটির পূর্বাঞ্চলের ডেমোসো, ইরাবতি অঞ্চলের প্যাথেইন, দক্ষিণের ডাওয়েই শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। এই বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে।

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় ও মধ্যাঞ্চলের মনিওয়া শহরের বাসিন্দারাও বিক্ষোভ করছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকায় বিক্ষোভকারীদের যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশটির খুব অল্প সংখ্যক মানুষের ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। 

ডাওয়েই শহরের নারী বিক্ষোভকারী চিট চিট উইন টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেন, যোগাযোগের জন্য আমাদের পুরোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে। আমরা গেরিলা প্রতিবাদ ব্যবস্থা ব্যবহার করছি। নিরাপত্তাবাহিনী এলে আমরা লোকজনকে দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। সংঘাত এড়িয়ে চলছি। আমরা যা করতে পারি; শুধুমাত্র তাই করছি। 

এসএস