পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান দেশটির ক্ষমতাসীন পিডিএম সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে প্রায় ১৫০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মানে তাকে বা তার দলকে কোণঠাসা করা নয়।

শনিবার (২৫ মার্চ) রাতে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের মিনার-ই-পাকিস্তানে আয়োজিত সমাবেশে ইমরান এই মন্তব্য করেন। রোববার (২৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

পবিত্র রমজান মাসের চতুর্থ সেহরির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে জনসমাবেশে দেওয়া ওই ভাষণে ইমরান বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মানে ইমরান খানের হাত বাঁধা নয়। ৪০টি সন্ত্রাসী মামলাসহ আমার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন, মামলার সংখ্যা প্রায় ১৫০টি। এসব মামলার অনেকগুলোই রাষ্ট্রদ্রোহ ও সন্ত্রাসের অভিযোগ করা হয়েছে।

তিনি সমাবেশস্থলে উপস্থিত হওয়ার জন্য তার দলের সমর্থকদের প্রশংসা করে বলেন, সব ধরনের বাধা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক মানুষ মিনার-ই-পাকিস্তানে এসেছেন। মানুষকে হতাশ করার জন্য ভীতি ছড়ানো হয়েছিল উল্লেখ করে পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের অবশ্যই জানা উচিত, (রাস্তা আটকানো এবং পথ অবরোধ করা) শিপিং কন্টেইনারগুলো প্রকৃত স্বাধীনতা চায় এমন লোকদের থামাতে পারে না।’

ইমরান বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তার সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছিল এবং চক্রান্তের অংশ হিসাবে দেশের ক্ষমতায় অপরাধীদের চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রকৃত স্বাধীনতা শুধুমাত্র ন্যায়বিচারের মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।

এসময় তিনি অন্যান্য দেশের মানুষের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তানে জনগণের আধিপত্য এবং আইনের শাসন থাকলেই সত্যিকারের স্বাধীনতা থাকবে।

পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান বলেন, একমাত্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই দেশকে বর্তমান সংকট থেকে বের করে আনতে পারে। তিনি বলেন, জনগণ বিচার বিভাগের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আদালতকে বলছে, তাদের সংবিধান বাঁচাতে হবে।

ইমরান বলেন, পাকিস্তান বর্তমানে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে সেটি থেকে মুক্ত করার জন্য ক্ষমতাসীন সরকারের কোনও পরিকল্পনা নেই। তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা পরাজয়ের ভয়ে ভীত হওয়ায় নির্বাচন স্থগিত করা হচ্ছে।

পিটিআই চেয়ারম্যান এসময় পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনার জন্য তার এজেন্ডা ঘোষণা করেন। ইমরান খান বলেন, অগ্রাধিকারভিত্তিতে রপ্তানি বাড়ানো হবে এবং রপ্তানিকারকদের ভিআইপি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

নিজের পিটিআই সরকার রপ্তানিতে শীর্ষে ছিল উল্লেখ করে ইমরান বলেন, (ক্ষমতায় গেলে) তার সরকার আইটি সেক্টরে ফোকাস করবে এবং ভারতের মতো আমরাও আমাদের আইটি রপ্তানি বাড়াব।

এছাড়া ডলার আকৃষ্ট করতে পর্যটনখাতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

পিটিআই প্রধান বলেছেন, খনিজ খাতকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে খনিজখাত প্রাদেশিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করার জন্য প্রদেশগুলোর হাতে অর্থের অভাব রয়েছে।

ইমরান বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন করা হবে এবং কৃষি উৎপাদনের হারও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, পিআইএ এবং রেলওয়ের মতো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলো সরকারের আয়ের বড় অংশ খেয়ে ফেলে, তাই তাদের পুনর্গঠন করা হবে এবং কর আদায় বাড়ানো হবে।

দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণি তাদের অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে জানিয়ে এর সুরাহা হওয়া দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হবে।

ইমরান জনগণের ব্যয়ের বোঝা কমাতে ক্ষমতায় আসার পর স্বাস্থ্য কার্ড প্রকল্প পুনরায় চালু করার ঘোষণা দেন। তিনি আরও বলেন, ডা. সানিয়া নিশতার যে দুর্দান্ত পরিকল্পনা করেছেন তাতে অভাবী পরিবারগুলোকে রেশন সরবরাহ করা হবে।

তরুণদের ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিতে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষকে গৃহঋণ দেওয়া হবে। ইমরান বলেন, জনগণের রায়ে নির্বাচিত হলেই কেবল একজন নেতা দেশকে বাঁচাতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এছাড়া পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই তার প্রথম পদক্ষেপ হবে বলেও জানান তিনি।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী পাকিস্তানিদের কাছে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার আছে এবং তারা সেই ডলার দেশে তখনই পাঠাবে যখন পাকিস্তানে আইনের শাসন থাকবে।

টিএম