রুশ হামলার জেরে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে হাঙ্গেরিতে পৌঁছানোর পর ব্যাগের ওপর বসে আছে দুই ইউক্রেনীয় শিশু। ছবিটি গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি তোলা

টানা ১৩ মাস ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ এই সময়ে পূর্ব এবং দক্ষিণ ইউক্রেন থেকে বহু মানুষ ও শিশুকে জোর করে নিজেদের দেশে নিয়ে গেছে রাশিয়া। বস্তুত, শহর অবরুদ্ধ করেও ইউক্রেনের নাগরিক এবং শিশুদের রাশিয়ায় যেতে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে।

তবে এসব শিশুদের ‘চুরি’ করা হয়েছে দাবি করে তাদের দত্তক না নেওয়ার জন্য রুশ নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন। বুধবার (২৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় শিশুদের দত্তক না নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার রাশিয়ানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক। তিনি বলেছেন, যুদ্ধের সময় ইউক্রেন থেকে এসব শিশু ‘চুরি’ হয়েছিল এবং রাশিয়ায় নির্বাসিত হয়েছিল।

রয়টার্স বলছে, রাশিয়া টানা ১৩ মাস ধরে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তাতে এখন পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ পরিবার এবং শিশুসহ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ায় জোরপূর্বক নির্বাসিত করা শিশুদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করাও অসম্ভব।

অবশ্য চলতি মার্চ মাসের শুরুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া এলভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি)। মূলত তাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেন থেকে শত শত শিশুকে অবৈধভাবে নির্বাসনের দায়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার নিজের টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে সরব হন ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক। সেখানে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে এতিমদের চুরি করা হয়েছে এবং এরপর দত্তক নেওয়ার জন্য রাশিয়ায় তাদের পরিত্যাগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের অস্থায়ীভাবে দখলকৃত অঞ্চলগুলো থেকে অবৈধভাবে নিয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয় এতিম শিশুদের দত্তক না নিতে আমি রুশ নাগরিকদের প্রতি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। আবারও আমি সকল রাশিয়ান তথাকথিত ‘দত্তক পিতামাতা’ এবং ‘অভিভাবকদের’ মনে করিয়ে দিচ্ছি: শিগগিরই হোক বা পরে; আপনাদের এই বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে।’

ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলগুলোর একীকরণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতে, বর্তমান হিসাব অনুযায়ী- ১৯ হাজার ৫১৪ ইউক্রেনীয় শিশুকে অবৈধভাবে রাশিয়ায় নির্বাসিত করা হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।

অবশ্য যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার শিশুকে রাশিয়ায় স্থানান্তরের কথা মস্কো কখনোই গোপন করেনি। তবে নিজেদের এই কর্মকাণ্ডকে রাশিয়া মানবিকভাবে উপস্থাপন করেছে এবং যুদ্ধ-পীড়িত অঞ্চলে এতিম ও পরিত্যক্ত শিশুদের রক্ষা করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দেশটি দাবি করেছে।

রয়টার্স বলছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে হামলা শুরুর পর যুদ্ধের প্রথম কয়েক মাসে এবং একই বছরের আগস্টের শেষের দিকে পূর্ব ও দক্ষিণে অধিকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে ইউক্রেন বড় ধরনের পাল্টা আক্রমণ শুরু করার আগে বেশিরভাগ মানুষ ও শিশুদের রাশিয়ায় স্থানান্তরের এই ঘটনা ঘটে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে বলেছিল, সেসময় পর্যন্ত ৩৫ লাখ মানুষকে রাশিয়ায় আনা হয়েছে, যার মধ্যে ৫ লাখেরও বেশি শিশু রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের জুলাইয়ে বলেছিল, ২ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে তাদের বাড়ি থেকে রাশিয়ায় ‘জোরপূর্বক বিতাড়িত করা হয়েছে’।

এদিকে রুশ বার্তাসংস্থা তাস খারকিভ অঞ্চলের রাশিয়া-অধিকৃত অংশের মস্কো-নিযুক্ত কর্মকর্তা ভিটালি গানচেভকে উদ্ধৃত করে মঙ্গলবার বলেছে, এই অঞ্চলের একদল শিশুকে তাদের পিতামাতা বা অভিভাবকের সম্মতিতে গত বছর রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।

ভিটালি গানচেভ বলেছেন, ‘শিশুদের চমৎকার অবস্থায় রাখা হয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু দেওয়া হয়েছে। এবং যতক্ষণ না তাদের বাবা-মা তাদের কাছে ফিরে আসছেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের যত্ন নেব।’

টিএম