ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে খাবারের খোঁজে হাতির হন্যে হয়ে ঘোরার দিন শেষ হতে চলেছে। স্থলভাগের এই বৃহত্তম প্রাণীদের জন্য এবার খাদ্য এবার জন্য ‘ভাণ্ডারা’ বা খাদ্যভাণ্ডার তৈরি করছে রাজ্যের বনদপ্তর। সেখানে থাকবে হাতিদের পছন্দের খাবার।

ফলে সামনের দিনগুলোতে লোকালয়ে হাতির উৎপাতের আতঙ্ক কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। খাদ্যভাণ্ডারের জন্য অভিজ্ঞতার নিরিখে খাদ্যতালিকাও তৈরি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

জঙ্গল সংলগ্ন এই খাদ্যভাণ্ডারগুলোতে মিলবে কলা, তরমুজ, চালতা, মৌসুমি সবজিসহ মোট ৩৯ রকম খাদ্য, থাকবে পানীয় জলের ব্যবস্থা। রাজ্য সরকারের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজ্যে হাতির সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাই হাতির খাবারের জন্য উন্নত প্রযুক্তিতে খাদ্যভাণ্ডার তৈরি করা হবে। এ সম্পর্কিত প্রাথমিক পর্যায়ে পরিকল্পনা ইতোমধ্যে হয়ে গিয়েছে।’  

আগামী ৬ মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে— উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, খাদ্যভাণ্ডার তৈরির পাশাপাশি হাতিদের যাতায়াতের জন্য মোট ১৪টি করিডর তৈরি পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। সেসবের মধ্যে ৭টি করিডোরের কাজ শুরু হবে শিগগিরই। এক একটি করিডর প্রায় সাত আট কিলোমিটার লম্বা হবে।

মূলত, পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড থেকে খাবারের খোঁজে হাতি প্রায়ই পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি জেলায় প্রবেশ করে হাতির দল। মাঝেমধ্যে তারা লোকালয়েও ঢুকে যায়। বিশেষ করে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু জঙ্গল অধ্যুষিত জেলায় মাঝেমধ্যেই হাতির উপদ্রব দেখা যায়। হাতিদের কারণে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয় এবং এই ব্যাপারটিকে ঘিরে মানুষ ও হাতির মধ্যে সংঘাত দিন দিন বাড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে। কয়েকদিন আগে হাতির আক্রমণে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

রাজ্য সরকারের বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বনাঞ্চলেই যেন হাতি পর্যাপ্ত খাদ্যের জোগান পায় তার জন্য প্রাথমিকভাবে পাঁচটি এলাকায় খাদ্যভাণ্ডার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি এলাকা নির্বাচনও করা হয়েছে। এগুলো হলো লালগড়, বেলপাহাড়ি ও তপোবনের জঙ্গল।

সেখানে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বৈদ্যুতিক তারের সুরক্ষার ভিতরে থাকবে হাতির খাবারের ব্যবস্থা, তৈরি করা হবে জলাশয়ও। হাতিদের করিডরগুলোতেও বৈদ্যুতিক তারের সুরক্ষা থাকবে।

বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘আমরা চাই বন্যপ্রাণ রক্ষা হোক, মানুষও নিরাপদে থাকুক। সে কারণেই এই দুই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

এসএমডব্লিউ