যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের নতুন যে ধরনটি শনাক্ত হয়েছে তাতে আগামীতে বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের কোভিডে আক্রান্ত ও মৃত্যুর শঙ্কা রয়েছে বলে নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। মহামারিতে রূপ নেয়া প্রচলিত ভাইরাসটির তুলনায় নতুন ধরনটির বিস্তার এবং সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এই আশঙ্কা দেখছেন গবেষকরা।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সেন্টার ফর ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিং অব ইনফেকশাস ডিজিজের সর্বশেষ গবেষণা বলছে, অভিযোজন বা মিউটেশনের ফলে উদ্ভুত এই ধরন পূর্বসূরী ভাইরাসের তুলনায় ৫৬ শতাংশ অধিক হারে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম।

এর আগে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছিল, নতুন এই ধরনটির সংক্রমণ সক্ষমতা মূল করোনাভাইরাসের অন্যান্য ধরণগুলোর তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি। গত ১৯ ডিসেম্বর ব্রিটেনের শীর্ষ বিজ্ঞানবিষয়ক উপদেষ্টা প্যাট্রিক ভ্যালেন্স বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের দুই ডজন ধরন শনাক্ত হয়েছে। মিউটেশন বা অভিযোজনের ফলেই নতুন ধরনটির আগমন ঘটেছে।

নতুন এই ধরনটির কারণে সামনে করোনা পরীক্ষা, চিকিৎসা এবং সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে শুরু হওয়া টিকা কর্মসূচি কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। যদিও ইউরোপের স্বাস্থ্যবিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বলছে, এটি তার পূর্বসূরীর তুলনায় এতটা ভিন্ন নয় যে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা এক্ষেত্রে ব্যর্থ হবে।

যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও সিঙ্গাপুরেও এই ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। নভেম্বর থেকে ইংল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে যে লকডাউন চলছে, তা এই ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধে কেমন কার্যকর হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। ইংল্যান্ডে একজন ব্যক্তির দেহে সর্বপ্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল, তারপর বর্তমানে পুরো বিশ্বে তা ছড়িয়ে পড়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাইরাসটির এই নতুন ধরনটির সংক্রমণের গতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সপ্তাহভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচির গতি ও ব্যাপ্তি আরও বাড়ানো উচিত। এখন যেখানে প্রতি সপ্তাহে ২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হচ্ছে; সেখানে ২০ লাখ মানুষকে দেয়া প্রয়োজন।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজারে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। শুরুর দিকে এই ভাইরাসের তথ্য গোপন রাখার চেষ্টা করলেও দ্রুত বিস্তার ঘটতে থাকায় চীন নতুন এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের তথ্য স্বীকার করে। চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ৯ জানুয়ারি। করোনায় প্রথম এই প্রাণহানি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে ঘটেছে বলে দাবি করে চীন।

উহানে শনাক্ত হওয়ার চারদিন পর চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায় ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে। দ্রুত বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় গত ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

চীনের বাইরে করোনায় প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ২ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনে। ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগের নামকরণ করে ‘কোভিড-১৯’। ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ৭ কোটি ৯৮ লাখ ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ১৭ লাখ ৫১ হাজারের বেশি।

বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসের তাণ্ডব চললেও এখন পর্যন্ত মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার এবং জার্মানির বায়োএনটেক ছাড়া কেউই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আনতে পারেনি। বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশ ইতোমধ্যে ফাইজারের এই ভ্যাকসিন গণহারে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে।

সূত্র: ব্লুমবার্গ।

এসএমডব্লিউ/এসএস