বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলের দিকে এগিয়ে আসা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে দুর্যোগ সতর্কতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ডিজাস্টার অ্যালার্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন সিস্টেম (জিডিএসিএস)।

সংস্থাটি সতর্কবার্তায় বলেছে, বাতাসের গতিবেগ, মানুষের ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ার শঙ্কা এবং দুর্বলতার কারণে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় মোখা-২৩ মানবিক জীবনের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

জিডিএসিএস আরও জানিয়েছে, এ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় থাকবেন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ২৫ লাখ মানুষ। তবে মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সতর্কতা দিয়েছে সংস্থাটি।

ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ২৪১ কিলোমিটার পর্যন্ত ওঠতে পারে। যা তাদের হিসাব অনুযায়ী একটি ক্যাটারি-৪ ঘূর্ণিঝড়। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছাসও হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের খোঁজ-খবর রাখা এ আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। 

আরও পড়ুন>>>মধ্যরাতেই মোখার অগ্রভাগের আঘাত, বাতাসের গতি বেড়ে ২০০ কিমি

এদিকে এর আগে শনিবার (১৩ মে) রাতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ১৬ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে জানায়, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। যেটি এর আগে ছিল ৬৩০ কিলোমিটার দূরে।

বুলেটিনে বলা হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হবে। এরপর রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আজ মধ্যরাত নাগাদ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে। 

আরও পড়ুন>>>‘মোখা দেখতে’ কুয়াকাটায় এসেছেন তারা

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুন>>>ঘূর্ণিঝড়ে রোহিঙ্গাদের কী হবে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উদ্বেগ

কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

বুলেটিনে আরও জানানো হয়, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

সূত্র: জিডিএসিএস

এমটিআই