শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব শুরু হয়েছে মিয়ানমারে। দেশটির রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিট্যুয়ে শহরের বেশ কিচু গাছ ও বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সিট্যুয়ে থেকে ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে গওয়ার এলাকার বেশ কিছু বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে  মোখার আঘাতে। বেশ কিছু গাছ-পালা ও বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোখার তাণ্ডবে।

রোববার (১৪ মে) দেশটির সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  দক্ষিণ রাখাইন উপকূল থেকে প্রায় দুই মাইল অভ্যন্তরের এক গ্রামের বাসিন্দা জানান, শনিবার রাতে প্রবল বাতাসে প্রায় ৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগ বাসিন্দা বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছেন।

রোববার সকাল থেকেই মোখার প্রভাবে সিট্যুয়ে ও দক্ষিণে থান্ডওয়ে শহরে প্রবল বাতাস ও বৃষ্টি লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে প্রবল ঝড়ের আশঙ্কায় দেশের বহু এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে মিয়ানমার। এছাড়া দেশটির উপকূলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে লক্ষাধিক মানুষকে।

ঘূর্ণিঝড় মোখা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে যাচ্ছে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখার ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কায় মিয়ানমারের উপকূলের আশপাশের এলাকার লক্ষাধিক বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা রোববার বিকেলে রাখাইনের সিট্যুয়ের কাছে আঘাত হানতে পারে এবং এর আগেই লক্ষাধিক রাখাইন বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছেড়েছেন।

ইরাবতী বলছে, রাখাইনের সিট্যুয়ের পাশাপাশি কিয়াউকফিউ, মংডু, রাথেদাউং, মাইবোন, পাউকতাও এবং মুনাং শহরে লাল সতর্কতা জারি করেছে মিয়ানমারের জান্তা। এছাড়া এই শহর ও এলাকাগুলোতে একই সতর্কতা জারি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা-বিরোধী বেসামরিক জাতীয় ঐক্য সরকার।

এক বিবৃতিতে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক এবং মানবিক সমন্বয়কারী রামানাথন বালাকৃষ্ণান বলেছেন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করার জন্য ‘প্রস্তুত’ রয়েছে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি দেশের রাখাইন ও চিন প্রদেশ এবং ম্যাগওয়ে ও সাগাইং অঞ্চলগুলোকে প্রভাবিত করবে। আর এসব অঞ্চল ইতোমধ্যেই দেশে চলমান সংঘাতের কারণে বড় মানবিক সংকটের মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে।

আরাকান আর্মির (এএ) মুখপাত্র খাইং থু খা বলেছেন, গত বুধবার থেকে তারা রাখাইনের প্রায় ১ লাখ ২ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়েছে এবং তাদেরকে স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সরবরাহ করছে। আরাকান আর্মির ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে ঝড়ের পর দুর্গত মানুষের জন্য সহায়তা প্রদান করতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের আগে সিট্যুয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ বাসিন্দা তাদের বাড়ি ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন শহরটির বাসিন্দা ও লেখক ওয়াই হিন অং। রাখাইনের এই শহরের জনসংখ্যা এক লাখেরও বেশি এবং মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজে সহায়তা করেছেন ওই লেখক।

ওএফ