সুয়েজ খালে নজিরবিহীন ট্রাফিক জ্যাম
বৃহৎ কন্টেইনার জাহাজ আটকে বন্ধ হয়ে গেছে মিসরের সুয়েজ খাল। সরু এই খালে একদিক থেকে অন্যদিকে ঘোরানোর সময় অগভীর পানিতে গত মঙ্গলবার আটকে যায় জাহাজটি। আর এর পরেই আটকে যাওয়া জাহাজের দুইপাশে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামের।
সুয়েজ খালে আটকে যাওয়া জাহাজটির নাম ‘এভার গিভেন’। ৫৯ মিটার (১৯৪ ফুট) চওড়া এই জাহাজটি টেনে বের করে নিতে কয়েকটি উদ্ধারকারী নৌকা (টাগ বোট) মোতায়েন করা হয়েছে। জাহাজ উদ্ধারে কাজ করছে ড্রেজারও। জাহাজটির একপাশ পানিতে ভেসে থাকলেও অন্যপাশটি মাটিতে আটকে গেছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার বিকেলে ড্রেজার দিয়ে মাটি সরিয়ে তাই আটকে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধারের কাজ শুরু হলেও পরে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কাজ মুলতবি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আরও জোর গতিতে উদ্ধার কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আর তাই যানবাহন পরিবহনের কাজে নিয়োজিত জাহাজটি এখনও সেখানেই আটকে রয়েছে। ফলে জাহাজের দুই দিকে সুয়েজ খালের ভেতরে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামের।
সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজে নজরদারি ও ট্রাকিংয়ে নিযুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ১২০ মাইল দীর্ঘ এই খাল পার হতে শতাধিক জাহাজ এখন অপেক্ষা করছে। এমনকি আটকে পড়া জাহাজটি সরিয়ে খুব দ্রুত সুয়েজ খাল চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলেও সৃষ্ট জাহাজ-জট কাটাতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। আর এতে ব্যাহত হতে পারে বিশ্ব বাণিজ্যের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা।
বিজ্ঞাপন
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজে নজরদারি করা ট্যাংকার ট্রাকারস’র বরাত দিয়ে আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, জাহাজ আটকে পড়ায় সুয়েজ খালে অন্যান্য জাহাজের লম্বা সারি সৃষ্টি হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ‘সৌদি আরব, রাশিয়া, ওমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের তেল বহনকারী ট্যাংকারগুলো পারাপারের জন্য আটকে পড়া জাহাজের উভয়পাশে অপেক্ষা করছে।’
মার্কিন এই সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, সুয়েজ খাল পার হতে না পেরে আটকে পড়া জাহাজের পেছনে উত্তর দিকে আরও ১৫টি জাহাজ নোঙর করেছে। খাল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হলে তারা ওই এলাকা ছাড়তে পারবে। একইভাবে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ পাশেও।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, সমুদ্রে দৈনিক হিসেবে চলাচলকারী জাহাজের ৩০ শতাংশই যাতায়াত করে থাকে সুয়েজ খাল দিয়ে। সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বছরজুড়ে প্রায় ১৯ হাজার জাহাজ চলাচল করেছে এই খাল দিয়ে। দৈনিক হিসেবে যা প্রায় ৫২টি।
সুয়েজ খালে আটকে যাওয়া এভার গিভেন জাহাজটি ২০১৮ সালে নির্মাণ করা হয়। পানামায় নিবন্ধনভুক্ত এবং দেশটির পতাকাবাহী এই জাহাজটি চীন থেকে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম বন্দরে যাচ্ছিল।
মিসরের সুয়েজ অঞ্চলে ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে যুক্ত করে ১২০ মাইল (প্রায় ১৯৩ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই খালটি খনন করা হয়। ১৮৫৬ সালে গঠিত হয় সুয়েজ ক্যানেল কোম্পানি। প্রায় তিন বছর পর, ১৮৫৯ সালের এপ্রিল মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় খালটির খননকাজ।
১০ বছর পর ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর নৌ-চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় সুয়েজ খাল। এই খালের আয় দিয়েই পূরণ হয় মিসরের জাতীয় বাজেটের প্রায় ৮০ শতাংশ।
সুয়েজ খাল খনন করার আগ পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জাহাজগুলোকে ভূমধ্যসাগর থেকে পুরো আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে, উত্তমাশা অন্তরীপ পাড়ি দিয়ে আরব সাগর হয়ে ভারত এবং প্রশান্ত মহাসাগরে যেতে হতো। এই যাত্রা ছিল সময়সাপেক্ষ ও বিপজ্জনক। তবে সুয়েজ খাল খনন ও চালুর পর এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যকার সেই দূরত্ব বহুগুনে কমে এসেছে।
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, সিএনএন
টিএম