সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ এবং গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসা মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে দেশটির জান্তা সরকার। আর এবার দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কারেন প্রদেশে বিমান হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পালিয়ে আসা মানুষজন সীমান্তবর্তী ওই এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিমান হামলার পর প্রায় তিন হাজার মানুষ সীমান্ত পার হয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন।

জাতিগত সশস্ত্র কারেন সংখ্যালঘুদের সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) বর্তমানে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করছে। এই গোষ্ঠীটি বলেছে, কারেন ব্রিগেড-৫ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন পাপুন জেলার ডে পু নো এলাকায় যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালিয়েছে সামরিক বাহিনী। শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকের এই হামলা চালানো হয়।

কারেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের গ্রুপ কারেন পিস সাপোর্ট নেটওয়ার্কের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সেনাবাহিনী ওই এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে... আক্রান্ত গ্রামের বাসিন্দারা বলেছেন, এতে দু’জন নিহত ও আরও দু’জন আহত হয়েছেন। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল। সেখানে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

তবে এই হামলার বিষয়ে মন্তব্য জানতে টেলিফোন করলে জান্তা সরকারের মুখপাত্র সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। গত কয়েক বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনীর নতুন এই হামলাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলা হচ্ছে।

কারেন উইমেন’স অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুত মানুষের বসবাসের একটি ক্যাম্পসহ সীমান্তবর্তী মুতরাও জেলার পাঁচটি এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।

এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘বর্তমানে গ্রামবাসীরা জঙ্গলে লুকিয়ে আছেন। এছাড়া আশ্রয়ের খোঁজে তিন হাজারের বেশি মানুষ সীমান্ত পার হয়ে থাইল্যান্ডে চলে গেছেন।’

থাইল্যান্ডের টেলিভিশন চ্যানেল থাই পিবিএস জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পার হয়ে প্রায় ৩ হাজার মানুষ থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন। অবশ্য এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি থাই কর্তৃপক্ষ।

এর আগে, শনিবার কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন জানায়, ব্রিগেড ৫ বাহিনী সরকারি সৈন্যদের একটি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এই হামলায় একজন লেফটেন্যান্ট-কর্নেলসহ ১০ সৈন্য নিহত হয়েছে। রাজধানী নেইপিদোতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপনের সময় থাই সীমান্তে ওই হামলা হয়।

কেএনইউ বলছে, মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক জান্তার সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা শত শত মানুষকে কারেন অধ্যুষিত সীমান্তের গ্রামগুলোতে আশ্রয় দিয়েছে তারা। 

২০১৫ সালে দেশটির সরকারের সঙ্গে কেএনইউ অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করার পর এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স

টিএম