অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ও সংশয় যেন কাটছেই না। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে এই টিকার কার্যকারিতা কতটা, সেটা নিয়ে তেমন আলোচনা হচ্ছে না। বরং কিছু মানুষের রক্ত জমাট বাঁধার মতো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে একাধিক দেশ নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের জন্য এই টিকা প্রয়োগ বন্ধ, সীমিত বা ক্ষেত্রবিশেষে সতর্কতা জারি করেছে।

ইউরোপের আরেক দেশ জার্মানি মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় ভ্যাকসিন কমিশনের মূল্যায়নের পর কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা বুধবার থেকে শুধু ৬০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের জন্য এই টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অবশ্য ৬০ বছরের কম বয়সীরাও এই টিকা নিতে পারেন, তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ শুনে ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার পর জার্মানিতে কিছু মানুষের তীব্র প্রতিক্রিয়া, এমনকি মৃত্যুর ঘটনার পর জরুরি ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। টিকা নেওয়ার চার থেকে ১৬ দিনের মধ্যে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। মোট ১৬টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৬৩ বছর বয়সী নারীর শরীরে এমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। দেশটিতে এখনও পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত কমবয়সী স্বাস্থ্যকর্মী ও শিক্ষকরা টিকা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

জার্মানির জাতীয় ভ্যাকসিন কমিশনের মতে, রক্ত জমাট বাঁধার মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত বিরল হলেও তার ফলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বার্লিন ও মিউনিখ শহর কর্তৃপক্ষ সবার আগে ৬০ বছরের কম বয়সের মানুষের জন্য টিকা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর গোটা জার্মানিতেই সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।

জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত একদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার জন্য বড় ধাক্কা হলেও এর ফলে ৬০ বছরের বেশি বয়সের মানুষকে আরও দ্রুত টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। আর তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই সুযোগ গ্রহণের আহ্বানও জানান তিনি।

এদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে সংশয়ের উল্লেখ করে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল বলেন, এমন সিদ্ধান্তের ফলে করোনাভাইরাসের টিকাগুলোর ওপর আস্থা বাড়া উচিত। কারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ কোনো সংশয় দেখা দিলেই প্রতিটি ঘটনা ভালো করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

তার মতে, এমন খোলামেলা ও স্বচ্ছভাবে পরিস্থিতি সামলানো সবচেয়ে ভালো পথ। সুযোগ পেলে তিনি নিজেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা নেবেন বলেও জানান তিনি।

চ্যান্সেলর ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও সার্বিকভাবে জার্মানিতে করোনা টিকাদান কর্মসূচির ধীর গতি আরও চাপের মুখে পড়বে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তা সত্ত্বেও সরকার চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য টিকার সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রায় অনড় রয়েছে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

টিএম