তিন বাহিনী প্রধানের পদত্যাগ, সংকটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো
দেশে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। তার ওপর সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা একযোগে পদত্যাগ করায় বেশ বেকায়দায় পড়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো।
মঙ্গলবার ব্রাজিলের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল অ্যাডসন লিয়েল পুজল, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল ইকুয়েস বারবোসা এবং বিমানবাহিনী প্রধান আন্তোনিও কার্লোস বার্মুডজ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তার আগেরদিন সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী আর্নেস্তো আরাউজোকে।
বিজ্ঞাপন
ব্রাজিলে বর্তমানে করোনা টিকার ডোজের সংকট চলছে। চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যথাযথ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যর্থতার কারণে এই সংকট দেখা দিয়েছে— দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যরা এই অভিযোগ তুললে মন্ত্রিসভা থেকে আরাউজোকে অব্যাহতি দেন বোলসানারো।
আরাউজোকে অব্যাহতি দেওয়ার পরই বেঁকে বসেন ব্রাজিলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফার্নান্দো অ্যাজিভেডো ই সিলভা। সোমবার এক বার্তায় তিনি বলেন, ব্রাজিলের সামরিক বাহিনীর উচিত প্রেসিডেন্টের প্রতি আনুগত্য কমিয়ে সংবিধানের প্রতি বিশ্বস্ততা বাড়ানো। তার এই বার্তার একদিন পরই পদত্যাগ করলেন দেশটির তিন বাহিনীর প্রধানরা।
বিজ্ঞাপন
এদিকে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই এ রোগে সংক্রমণ ও মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ওয়েবসাইট করোনাভাইরাস ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিলে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৮ এবং এ রোগে দেশটিতে মারা গেছেন ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৬ জন।
সংক্রমণ ও মৃত্যুর এই উর্ধ্বগতির জন্য প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর দায় অনেকখানি বলে মনে করেন বিরোধীরা। কারণ, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে যখন করোনা মহামারি শুরু হলো—বিশ্বের অধিকাংশ দেশ কোয়ারেন্টাইন, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত আদেশ আরোপ করলেও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ধারাবাহিকভাবে এগুলোর বিরোধিতা করে গেছেন।
তার যুক্তি ছিল, কোয়ারেন্টাইন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক বিধিনিষেধে কড়াকড়ি আরোপ করা হলে তা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে; যা করোনা মহামারির চেয়েও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে ব্রাজিলের জনজীবনে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এর আগে দেশবাসীকে ‘ঘ্যানঘ্যানানি’ বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন বলসোনারো।
কিন্তু দিন যতো পার হয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খারাপ হয়েছে ব্রাজিলের করোনা পরিস্থিতি। চলতি মাসে প্রথমবারের মতো ব্রাজিলে করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটির ২৮ টি প্রদেশের বেশিরভাগ হাসপাতাল করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চাপে ভেঙে পড়ার অবস্থায় পৌঁছেছে এবং আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্রমশ হুমকি হয়ে উঠছে ব্রাজিল।
বিবিসির লাতিন আমেরিকা বিষয়ক প্রতিনিধি উইল গ্রান্ট জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির জেরে ব্রাজিলে বলসোনারোর জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছিল আগেই। দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধানদের পদত্যাগ ও মন্ত্রীসভায় অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ায় বর্তমানে ব্যাপক চাপে রয়েছেন তিনি।
উইল গ্রান্ট বলেন, ‘বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে দু’বছর আগে ব্রাজিলে ক্ষমতায় এসেছিলেন বলসোনারো; কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তাতে বলা যায়, পুরো রাজনৈতিক জীবনে এর আগে এত প্রতিকূল অবস্থায় কখনও পড়েননি তিনি।
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ