করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদনে ‘সন্তুষ্ট নয়’ ১৪ টি দেশ। মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে প্রয়োজনীয় তথ্যের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস এই ‘আপত্তি’ মেনে নিয়ে বলেছেন, এই প্রতিবেদন ডব্লিউএইচওর করোনাভাইরাসের উৎস সম্পর্কিত গবেষণার প্রথম ধাপ। ডব্লিউএইচওর অনুসন্ধান অব্যাহত থাকবে এবং অদূর ভবিষ্যতে আরো নতুন তথ্য যুক্ত হবে।

এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়েছে, ডব্লিউএইচওর গবেষকদলকে পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছে দেশটির সরকার।

চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে মধ্য-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৪ সপ্তাহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়া চীনের হুবেই প্রদেশের উহান সফর করেন। সেখানে প্রায় এক মাস ধরে অনুসন্ধানের পর করোনার উৎপত্তি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন তারা।

ডব্লিউএইচও এবং চীনা বিজ্ঞানীদের করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানের এই খসড়া প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে মার্কিন বার্তাসংস্থা এসোসিয়েট প্রেস (এপি)। ওই প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস একটি ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে এতদিন যে গুঞ্জন ছিল; সেটি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ল্যাব থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

পাশাপাশি বলা হয়েছে, বাদুড় থেকে অন্য কোনও প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের দেহে ছড়িয়ে থাকতে পারে। করোনার উৎপত্তির এটিই সবচেয়ে সম্ভাব্য এক দৃশ্যপট।

সোমবার (২৯ মার্চ) এপি এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর মঙ্গলবার একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৪ টি দেশ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা মনে করছি, আন্তর্জাতিক গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধিদল সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের (করোনাভাইরাস) উৎস সম্পর্কিত সম্প্রতি যে প্রতিবেদনটি করেছে সেটি যথেষ্ট বিলম্বিত এবং প্রতিবেদনটিতে যথাযথ ও প্রকৃত তথ্যের অভাব রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য যেসব দেশের সরকারের প্রতিনিধিরা ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সেই দেশগুলো হলো— অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, জাপান, ইসরায়েল, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়ে এবং যুক্তরাজ্য।

একইদিন মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, ‘যদিও গবেষক দল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে যে কোনো গবেষণাগার নয়, বরং বাদুড় বা এইজাতীয় বন্য প্রাণীদের থেকেই মানবদেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, তবে আমার মনে হয় এটি এ সংক্রান্ত গবেষণার প্রথম ধাপ। এ ব্যাপারে আরো অনুসন্ধানের অবকাশ রয়ে গেছে এখনও। অদূর ভবিষ্যতে সেখানে (উহান) আরো কয়েকটি গবেষক দল পাঠানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।’

‘যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে, সেখানে এই ভাইরাসটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে না।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৪ টি দেশের বিবৃতি ও ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালকের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় চীন অভিযোগ করেছে, করোনা রোগটিকে রাজনৈতিক চেহারা দিতে চাইছে পশ্চিমা বিশ্ব, যা ‘কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য’ নয়।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, করোনাকে রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে বিশ্বের কিছু দেশ। এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এ ধরনের প্রচেষ্টা করোনার উৎস সম্পর্কিত গবেষণার ক্ষেত্র সংকোচনের পাশাপাশি মহামারির বিরুদ্ধে বিশ্বের দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগীতার পথও সীমাবদ্ধ করে তুলবে। যার ফলে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া আর কোনো লাভ হবে না।’

যার নেতৃত্বে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে উহান গিয়েছিল ডব্লিউএইচওর গবেষক দল সেই পিটার বেন এমবারেক বলেছেন, এ বিষয়ে আরো গবেষণা ও অনুসন্ধান প্রয়োজন।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কোনো গবেষণাগার থেকে এই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে— আমাদের পর্যবেক্ষণে এমন কোনো বিষয় যদিও আমরা পাইনি, তবে তা যে একেবারে অসম্ভব সেটাও জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। সবেচেয়ে বড় কথা— এই প্রতিবেদন কোনো স্থির বিষয় নয়। যদি আরো গবেষণা করা হয়, পরবর্তী প্রতিবেদন আরো সমৃদ্ধশালী হবে।’

সূত্র: আলজাজিরা

এসএমডব্লিউ