ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুরে গত মে মাসে মেতিস ও কুকিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেধে যায়। এরপর সেখানে হত্যাকাণ্ড, দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং গণধর্ষণের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে।

তিন সপ্তাহ আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো ও গণধর্ষণের ঘটনা ভাইরাল হয়। এবার সামনে এসেছে গণধর্ষণের আরেকটি রোমহর্ষক ঘটনা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গণধর্ষণের শিকার এক নারী পুলিশের কাছে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

অভিযোগকারী ৩৭ বছর বয়সী ওই নারী মণিপুরের চূড়চন্দ্রপূরের বাসিন্দা। এই নারী জানিয়েছেন—  তার বাড়িতে দুর্বত্তরা আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর গত ৩ মে দুই ছেলে, ভাগ্নি এবং ননদকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় একদল পুরুষের কাছে ধরা পড়েন। এরপর তাকে গণধর্ষণ করা হয়। ওইদিনই মণিপুরে দুই সম্পদ্রায়ের মধ্যে দাঙ্গা বেধে যায়।

আরও পড়ুন>>> ভারতের মণিপুরে কী ঘটছে?

তবে এতদিন গণধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি তিনি কাউকে জানাননি। কিন্তু যখন দেখতে পেয়েছেন অনেকেই এ বিষয়গুলো নিয়ে মুখ খুলছেন তখন তিনিও নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনাটি সামনে এনেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘নিজেকে এবং পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে, একঘরে হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে আমি বিষয়টি কাউকে জানায়নি। দেরিতে অভিযোগ করার কারণ হলো সামাজিক কলঙ্কের ভয়… আমি এমনকি নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম।’

বর্তমানে ওই নারী বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য তৈরি একটি আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতের দণ্ডবিধি ৩৭৬ডি, ৩৫৪, ১২০বি এবং ৩৪ ধারায় বিষ্ণপুর পুলিশ স্টেশনে মামলা (জিরো এফআইআর) করা হয়েছে।

ওই নারীর অভিযোগের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ মে দুর্বত্তরা তার এবং প্রতিবেশীদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া শুরু করে। এরপর জীবন বাঁচাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দ্রুত তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

আরও পড়ুন>>> মণিপুরে সরকারকেই দায়ী করলেন সেই তরুণীর মা

তিনি অভিযোগপত্রে বলেছেন, ‘আমি আমার ভাগ্নি আমার পেছনে নেই এবং দুই ছেলেকে হাতে ধরে আমার ননদকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে থাকি। আমার ননদও একটি শিশুকে কোলে নিয়ে রেখেছিল এবং সে আমার আগে পালিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমি রাস্তায় পড়ে যাই এবং ওঠে দাঁড়াতে পারছিলাম না। তখন আমার ননদ আমার কথা অনুযায়ী ভাগ্নি ও আমার দুই ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘যখন আমি ওঠে দাঁড়াতে সমর্থ হই, পাঁচ থেকে ছয় দুর্বৃত্ত আমাকে ধরে ফেলে। তারা আমাকে মৌখিকভাবে নির্যাতন শুরু করে এবং হামলা করে। আমার বাধা সত্ত্বেও তারা আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর তারা আমাকে যৌন নির্যাতন শুরু করে।’

ওই নারী জানিয়েছেন এ ঘটনার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মানসিক প্রশান্তি পেতে হাসপাতালেও যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে এ ভয়াবহ ঘটনা বর্ণনা করতে না পেরে চলে আসেন।

এই নারী তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।

সূত্র: এনডিটিভি

এমটিআই