বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, লকডাউন আরোপের পথে মহারাষ্ট্র
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে
অব্যাহতভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় রাজ্যজুড়ে পূর্ণ লকডাউন জারি করতে যাচ্ছে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ মহারাষ্ট্র। সংক্রমণ পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আসার আগ পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে বলে শুক্রবার এক টেলিভিশন ভাষণে জানিছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে।
গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে ভারতে ফের উর্ধ্বমূখী হয়েছে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেখচিত্র। শুক্রবার পুরো ভারতে করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৪৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৪৬৯ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রোগী মহারাষ্ট্রের। শুক্রবার সেই রাজ্যে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ৮২৮ জন।
বিজ্ঞাপন
ওইদিনই ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক ভাষণে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে বলেন, ‘বর্তমানে সংক্রমণের যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তা রুখতে আগামী দু-একদিনের মধ্যে রাজ্যজুড়ে লকডাউন আরোপ করা হবে। সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন। আগাম সতর্কবার্তা হিসেবে রাজ্যবাসীদের এই তথ্য জানানো হলো।’
শুক্রবারের বক্তব্যে রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে সাধারণ মানুষের উদাসীনতা ও অসতর্কতাকে দায়ী করেছেন উদ্ভব ঠাকরে। বিশেষ করে মাস্ক না পরা, সামাজিক দূরত্ববিধি না মানার কারণেই করোনা সংক্রমণের সাম্প্রতিক এই উল্লফন দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনা টিকা নেওয়ার পরও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। টিকা নেওয়ার পর থেকে মাস্ক পরা ও অন্যান্য বিধিনিষেধ মেনে চলা বন্ধ করে দেওয়াই এর প্রধান কারণ।’
বিজ্ঞাপন
মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সরকারি কর্মকর্তাদের ডেকে লকডাউন বিষয়ক একটি পরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ হিসেবে তখন তিনি বলেছিলেন, রাজ্যবাসী করোনা বিধিনিষেধ মানছে না।
সূত্র আরো জানিয়েছে, রাজ্যের পুনে শহরে ইতোমধ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং সেখানকার সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হোটেল, পানশালা, শপিং মল ও সিনেমা হলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যজুড়ে পিসিআর ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন করোনা টেস্টের মূল্য কমানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্র।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে পর্যন্ত করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরই, তৃতীয় স্থানে আছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ওয়েবসাইট করোনা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৩ লাখ ৯২ হাজার ২৬০ এবং মারা গেছেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৪১ জন।
গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ভারতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল সংক্রমণ। গড় হিসেবে সে সময় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজারেরও কিছু কম। মার্চ থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে এবং তা প্রায় উল্লম্ফনের পর্যায়ে পৌঁছায় মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে।
গত ১৬ জানুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ভারত। ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকাদান শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে টিকাদান কার্যক্রমের তৃতীয় পর্যায়।
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ