ভারতে আবারও সেই পরিচিত দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। বড় বড় শহরের হাসপাতালগুলোও রোগীতে পূর্ণ। বেড খালি নেই। গুদামঘর, অব্যবহৃত ট্রেন ছাড়াও বড় জনসমাগমস্থলের মতো এলাকা অস্থায়ী হাসপাতালে রুপান্তরিত হচ্ছে। আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে কোভিড বিধিনিষেধ। কিছু কিছু স্থানে নতুন করে জারি করা হয়েছে লকডাউন নিষেধাজ্ঞা।    

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু দিয়েছে ভারতে। করোনার নতুন অতিসংক্রামক ধরন ও বিধিনিষেধ মানার ব্যাপারে মানুষের অনীহাকে এর বড় কারণ হিসেবে বর্ণনা করছেন বিশ্লেষকরা। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে লাখো মানুষের বিশাল সমাবেশ হচ্ছে। এতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, পরিস্থিতি প্রথম দফার চেয়ে আরও ভয়াবহ হবে।  

গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৫৮ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন; যা এযাৎকালে একদিনে সর্বোচ্চ।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী সোমবার অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৫৮ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর দেশটিতে এর আগে একদিনে লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়নি। ভারত ছাড়া শুধু যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়নি।  

ভারতে এর আগে দৈনিক আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছিল সেপ্টেম্বরে। ওই সময় একদিনে সর্বোচ্চ ৯৮ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। প্রথম দফার প্রাদুর্ভাবে ওটাই ছিল সংক্রমণের চূড়া। এরপর আক্রান্ত কমতে থাকে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তো তা ৯ হাজারে নেমে আসে। তখন দেশটি মহামারি নিয়ন্ত্রণে এনেছে বলে প্রশংসা করাও শুরু হয়।

মুম্বাইয়ের জুহু সৈকতে মানুষজন উষ্ণ আবহাওয়া উপভোগ করছেন। ছবি- রোববার, ৪ এপ্রিল।

 কিন্তু মহামারির ভয়াল থাবা থেকে ভারত যে তখনো রক্ষা পায়নি তা মার্চের শুরু থেকে আবার দেখা যেতে থাকে। ওই সময় থেকে দেশটিতে প্রতিদিন আক্রান্ত বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। মাস শেষে হতে না হতে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে লক্ষাধিক। এই সময়ে দেশটিতে প্রায় প্রতিনিয়ত দ্বিগুন করে বেড়েছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। 

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী ও দেশটিতে করোনার প্রকোপে সবচেয়ে বিপর্যস্ত শহর মুম্বাইয়ের অ্যাসোসিয়েশন অব মেডিকেল কনসালটেন্টস এর প্রেসিডেন্ট দীপক বাইদ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, ‘এখানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বেডেরে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। হাসপাতাল রোগীতে পূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে বেড খালি না থাকার কারণে এখন অনেক রোগী হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। অনেকে যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তারা বাধ্য হয়ে নন-কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। 

নয়াদিল্লির সেন্টার ফর ডিজিস ডায়নামিকস, ইকোনোমিকস ও পলিসির রমণাম লক্ষ্মীনারায়ণ বলেন, ‘এখন ভারতে আক্রান্ত খুব দ্রুত বাড়ছে; যা গত বছরের তুলনায় ব্যতিক্রম। আক্রান্তের হারও এখন অনেক বেড়েছে।’  

গত বছরের চেয়ে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ার প্রধান কারণ গত বছর ভারতে আক্রান্ত বাড়ার আগে দেশটি এক মাসের বেশি সময় লকডাউনে ছিল। লকডাউন থাকায় সংক্রমণ কমেছিল। তারপর এত মানুষ আক্রান্ত হয়। আর এখন কোনো লকডাউন নেই। ফলে এবার এই সংক্রমণ বৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় ভয়াবহ হবে বলে শঙ্কা।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী সোমবারের লক্ষাধিক আক্রান্ত নিয়ে ভারতে মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার মারা গেছেন। 

এএস