পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারণার ওপর সোমবার রাত আটটা থেকে মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

ভারত ও কলকাতার সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন পশ্চিমবঙ্গে চলমান বিধানসভা নির্বাচনের কোনো প্রচরাণায় অংশ নিতে পারবেন না মমতা। সোমবার ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে থেকে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রচারে প্ররোচনামূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগে মমতাকে পাঠানো নোটিশের জবাবে কমিশন সন্তুষ্ট না হওয়াতেই ২৪ ঘণ্টার এই নিষেধাজ্ঞা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে ওপর নিষেধাজ্ঞা আনার দাবি উঠেছিল বিজেপির পক্ষ থেকে।

তবে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের জন্য কমিশনকে বিজেপির শাখা সংগঠন বলে সমালোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারতের কেন্দ্র সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপি নির্বাচনে মমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

নন্দীগ্রামে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর মমতা হুইলচেয়ারে সভা করছেন।

নিষেধাজ্ঞার কড়া সমালোচনা করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘মানুষ এর জবাব দেবে। পক্ষপাতদুষ্ট এই কমিশন বিজেপির শাখা সংগঠন। ভোটের বাক্সে এর জবাব দেবে মানুষ।’ আরেক মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘এটা গণতন্ত্রের জন্য কালো দিন।’

মমতা গত ৩ এপ্রিল হুগলির তারকেশ্বরে এক নির্বাচনী জনসভায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের এক জোট হয়ে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বিজেপি টাকার থলি নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করতে চায়। কিন্তু সংখ্যালঘু ভোট যাতে ভাগ না হয়; বিজেপির কথায় কান না দিয়ে সংখ্যালঘুদের একজোট হয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন মমতা।

তারকেশ্বরে তৃণমূলের ওই নির্বাচনী সভায় বিজেপিকে ঠেকানোর আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘মনে রাখবেন, বিজেপি এলে সমূহ বিপদ। সবচেয়ে বেশি আপনাদের।’

এরপর নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগে নোটিশ মমতাকে নোটিশ পাঠিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে হবে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন। গত শনিবারই নির্বাচন কমিশনকে সেই নোটিশের জবাব দেন মমতা। তবে কমিশন তাতে সন্তুষ্ট হয়নি। 

কমিশনের যুক্তি, ধর্ম বা জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া ‌‘আদর্শ নির্বাচনী’ আচরণবিধির পরিপন্থী। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী তার প্রার্থীপদ খারিজও করা যেতে পারে। তা নিয়েই নোটিশ পাঠায় কমিশন।

আগে মমতাকে দুটি নোটিশ পাঠিয়েছিল কমিশন। হুগলির তারকেশ্বরে নির্বাচনরী আচরণবিধি ভেঙেছেন, নির্বাচন কমিশন নোটিশ দেওয়ার পরে এক জনসভায় মমতা বলেন, ‘আমাকে ১০ বার শো-কজ করেও লাভ নেই। আমি একই জবাব দেব।’

কমিশনের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, ‘নন্দীগ্রামে মুসলিমদের যারা পাকিস্তানি বলেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কয়টা অভিযোগ হয়েছে? খালি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের।

এএস