নভেল করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার মাত্র ১৬ মাসের মধ্যে এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে প্রাণহানির সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে শনিবার। মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি শনিবার এক পরিসংখ্যানে করোনায় বৈশ্বিক মৃত্যুর মর্মান্তিক মাইলফলকে পৌঁছানোর খবর জানিয়েছে। 

বিশ্বজুড়ে টিকাদান শুরু হলেও এই ভাইরাসে দৈনিক মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত মাসে কিছুটা কমে এলেও চলতি মাসে করোনায় প্রাণহারি সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এপি বলছে, গত সপ্তাহে করোনায় বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যু গড়ে ১২ হাজারের বেশি ছিল।

তবে গণটিকাদানের কারণে ইসরায়েলের মতো কিছু দেশে এই ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা কমে এসেছে। অন্যদিকে, টিকার সংকটে ভারতে এই ভাইরাসে সংক্রমণ এবং মৃত্যু করোনা মহামারির গত বছরের রেকর্ড তছনছ করে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে, করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে যত মানুষ মারা গেছেন; তা ইউক্রেনের কিয়েভ, ভেনেজুয়েলার কারাকাস অথবা পর্তুগালের লিসবন শহরে বসবাসকারী মানুষের সমান। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে বসবাসকারী মানুষের চেয়ে বেশি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার তথ্য গোপন করায় করোনায় প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে ধারণা করা হয়। কারণ শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথমবার এই ভাইরাসের উৎপত্তির সময় অনেকে আক্রান্ত হলেও তা প্রকাশ করতেন না।

করোনা উৎপত্তি হওয়ার প্রথম ১২ মাসে বিশ্বজুড়ে প্রাণহানি ২০ লাখ ছাড়িয়ে যায় গত জানুয়ারিতে। কিন্তু পরের ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে মাত্র গত তিন মাসে। ইউরোপ এবং আমেরিকায় করোনার বিরুদ্ধে টিকাদান শুরু হয় চলতি বছরের শুরুর দিকে। বর্তমানে এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে টিকাদান কর্মসূচি চলছে।

টিকাদান কর্মসূচি জোরেসোরে অব্যাহত থাকলেও করোনায় প্রাণহানি আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহের প্রত্যেক দিন গড়ে ১২ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এমনকি একই সময়ে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাও ৭ লাখের বেশি ছিল। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনাভাইরাস মহামারিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেন, মহামারির মাত্র ১৬ মাসের মধ্যে আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়তে চাইনি। যেখানে আমাদের মহামারি নিয়ন্ত্রণের সফল ব্যবস্থা রয়েছে।

ব্রাজিলে দৈনিক মৃত্যু প্রায় ৩ হাজারে পৌঁছেছে; যা গত সপ্তাহের দৈনিক বৈশ্বিক মোট মৃত্যুর প্রায় এক চতুর্থাংশের সমান। সম্প্রতি দেশটিতে করোনার অতি-সংক্রামক নতুন একটি ধরনে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।

ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মহামারির গতি ধীর হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কারণ শুক্রবারও বিশ্বজুড়ে ৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৯৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে; যা আক্রান্তের হিসেবে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ।

এদিকে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে শনিবার থেকে পুরোপুরি লকডাউনে যাচ্ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল এই দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২ লাখ ৩৪ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং প্রাণ গেছে এক হাজার ৩৪১ জনের। 

ভারতে এ নিয়ে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ৭৫ হাজার ছাড়িয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ৪৫ লাখ ২৬ হাজারের বেশি; যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ। 

করোনায় মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বে সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৫ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৫ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি। এরপর মৃত্যুর হিসেবে দ্বিতীয় এবং আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশ ব্রাজিল। দেশটিতে ৩ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি।

শনিবার পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ কোটি ৬ লাখ ২৮ হাজারের বেশি মানুষ এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৩০ লাখ। মহামারি করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১১ কোটি ৯৫ লাখ ২১ হাজারের বেশি।

করোনাভাইরাস মহামারির তাণ্ডব ঠেকিয়ে বিশ্বজুড়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে ইতিহাসের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের করোনা ট্র্যাকার বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৫৫টি দেশের ৮৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক গড়ে এক কোটি ৭৪ লাখ মানুষকে করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। 

এসএস