করোনাভাইরাস মহামারির ভয়াবহতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকতে নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ব্রাজিল। করোনার নতুন ব্রাজিলীয় ধরন পি-১ গর্ভবতী মায়েদের জন্য এর আগের ধরনগুলোর চেয়ে বেশি ধ্বংসাত্মক হওয়ায় দেশটির সরকার শুক্রবার এই আহ্বান জানিয়েছে।

বৈশ্বিক মহামারির প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠা ব্রাজিলে মহামারিকালীন নারীদের গর্ভধারণ না করার এই পরামর্শ এমন এক সময় এলো; যখন দেশটিতে প্রত্যেকদিন করোনায় মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

করোনার নতুন ধরনে আক্রান্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্রাজিল। দেশটির হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে পরিপূর্ণ, ওষুধের তীব্র সংকটের মুখেও পড়েছে। গুরুতর অসুস্থদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ঠাঁই মিলছে না।

এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রাফায়েল প্যারেন্টি বলেন, ‌‘যদি সম্ভব হয় তাহলে ভালো সময় না আসা পর্যন্ত গর্ভধারণ পিছিয়ে দিন।’ তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপের কারণে এই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে অতি-সংক্রামক এবং দ্রুত ছড়াতে সক্ষম ব্রাজিলীয় ধরন পি-১ এর কারণেও সরকার দেশের নারীদের এই পরামর্শ দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

প্যারেন্টি বলেন, বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসা অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে— গর্ভবতী নারীদের শরীরে নতুন এই ধরনটি আরো বেশি আগ্রাসী।

আমাজন নগরীর মানাউস দ্বীপে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের পি-১ ধরনটি শনাক্ত হয়; যা দ্রুতই ব্রাজিলে ব্যাপক আগ্রাসী হয়ে ওঠে। দেশটিতে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে নতুন এই ধরনটি বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনা মহামারিতে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে। তবে ব্রাজিলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন দেশটির তরুণরা।

হাসপাতালের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত মার্চে দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হওয়া রোগীদের অর্ধেকের বেশিরভাগের বয়স ৪০ বছর অথবা তারও কম।

করোনায় সংক্রমণ এবং মৃত্যু বৃদ্ধি পেলেও দেশটির প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো লকডাউনের বিরোধী। মহামারির বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে তিনি প্রায়ই বিশাল বিশাল জন-সমাবেশ করছেন। দেশটিতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগও শুরু হয়েছে সম্প্রতি। 

সরবরাহ সংকটের কারণে চলতি সপ্তাহে ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে টিকাদান স্থগিত হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার জরুরিভিত্তিতে বেইজিং থেকে ভ্যাকসিনের একটি চালান ব্রাজিলে পৌঁছেছে। আগামী সপ্তাহে স্পেনের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার ভ্যাকসিন দেশটিতে পৌঁছাতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

সূত্র: রয়টার্স, সিএনএন।

এসএস