ইরানের সঙ্গে বিশ্বের ছয় পরাশক্তি দেশের জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জ্যাকোপা) নামে যে পরমাণু চুক্তিটি হয়েছিল, সেটি বাস্তবায়নে অগ্রগতি হয়েছে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এ বিষয়ক এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন ইরান ও ছয় দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা।

গত বৃহস্পতিবার ভিয়েনায় জ্যাকোপার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে এক বৈঠকে বসেছিলেন ইরান, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য। শনিবার বৈঠক শেষ হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।

বৈঠকে ইরানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন দেশটির উপপররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাঘশি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আরাঘশি বলেন, ‘বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দু’টি— প্রথমটি হলো যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর যে নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ করেছে সেগুলো কবে নাগাদ তোলা হবে এবং দ্বিতীয়টি- জ্যাকোপা ইরান পারমাণবিক কর্মসূচিকে কতদূর পর্যন্ত অনুমোদন দেবে।’

আরাঘশি বলেন, ‘একটি বৈঠকে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এখনও কিছু গুরুতর বিষয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের; তবে তারপরও আমি বলব বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে।’

বৈঠকে উপস্থিত রাশিয়ার প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানভও সাম্প্রতিক এক টুইটবর্তায় জানিয়েছেন, বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে এবং একে ধরে রাখতে হলে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘পারস্পরিক আলোচনা অব্যাহত রাখা এবং নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করাই এই অচলাবস্থা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাটানোর একমাত্র পথ।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিভাগের উপপ্রধান এনরিক মোরা এ সম্পর্কিত টুইটবর্তায় লিখেছেন, ‘বৈঠকে উপস্থিত আমরা সবাই একই উদ্দেশ্য সাধনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়া— বিশ্বের এই ছয় পরাশক্তি রাষ্ট্রের সঙ্গে ২০১৫ সলে পরমাণু চুক্তি বা জ্যাকোপা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ইরান। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী- ইরান ধীরে ধীরে পরমাণু প্রকল্প থেকে সরে আসবে- এর পরিবর্তে দেশটির বিরুদ্ধে যেসব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে- সেগুলোও পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যত নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। ফলে চুক্তিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় এবং কার্যত সুতোয় ঝুলতে থাকে জ্যাকোপা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, ইরান যদি ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প বন্ধ করে, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আবার জ্যাকোপাতে ফিরবে। অন্যদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই জ্যাকোপাতে ফিরতে চায়, সেক্ষেত্রে প্রথমে তাকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার কারণে গত তিন বছরে ব্যাপক সংকটে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর সূত্রে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ববাজার থেকে খাদ্য, ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও আমদানি করতে পারছে না ইরান।

চুক্তির অচলাবস্থা কাটাতে গত ফেব্রুয়ারিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ীই ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত হলো এই বৈঠক।

সূত্র: আলজাজিরা

এসএমডব্লিউ