ফিলিস্তিনের ‘নবী মুসা’ মসজিদে আসলেও পার্টি হচ্ছিল?
নবী মুসা’ মসজিদে পার্টির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ডিজে সামা আবদুল হাদি
ফিলিস্তিনের ‘নবী মুসা’ মসজিদে পার্টি করার অভিযোগে সামা আবদুল হাদি নামে দেশটির একজন জনপ্রিয় নারী ডিজেকে গ্রেফতার করে ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
পশ্চিম তীরে জেরুজালেম ও জেরিকোর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই মসজিদে নবী মুসা সমাহিত আছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। শনিবার সেখান থেকেই ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সামাসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ ছিল তারা সেখানে পার্টি করছিল।
বিজ্ঞাপন
এরআগে পার্টি চলাকালে সেখানে বিক্ষুব্ধ মানুষজন ঢুকে পড়ে পার্টি বন্ধ করে দেয়। ওই পার্টির ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায় স্থানীয়দের মধ্যে।
পার্টিতে যারা এসেছিলেন তারা সেখানে মদপান করছিলেন ও ড্রাগ নিচ্ছেলেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। এ পার্টি চলতে দেয়ার অভিযোগে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উঠেছে সেখানকার মানুষের মনে।
বিজ্ঞাপন
ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ শাতাইয়্যাহ বলেছেন, এ ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং এর জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
ডিজে সামার আইনজীবী হাদি মাশাল বলছেন, সামার বিরুদ্ধে মসজিদের পবিত্রতা নষ্টের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত চলছে তা এখনও শেষ হয়নি। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে এ তদন্ত শেষ হবে।
ডিজে সামার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয় বলে দাবি করছে তারা বাবা সাদ আবদুল হাদি। তিনি বলছেন, একটা পার্টি হচ্ছিল সত্যি, তবে তা অন্য একটি অংশে। মসজিদে কেউ ঢোকেইনি। আর মদ খাওয়ার ও ড্রাগ নেওয়ার যে কথাটি বলা হচ্ছে সেটিও সত্য নয়।
তার মেয়ের বিরুদ্ধে মসজিদে টেকনো মিউজিক বাজানোর যে অভিযোগ আনা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি বলছেন, এটা বাজারের অংশে হচ্ছিল। সেখানে মানুষ কেনাকাটা করতে আসে ও গেস্টহাউজে যারা থাকতে আসেন তারা যাওয়া-আসা করেন।
সামার বাবার দাবি, ওই পার্টি নিয়ে মানুষের মনে যে ক্ষোভ রয়েছে সেটা থেকে বাঁচতেই তার মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলছেন, মনে হচ্ছে মানুষের ক্ষোভ কিভাবে ঠেকাতে হয় তা তারা জানে না। আর সে কারেণেই তার মেয়েকে বলির পাঁঠা বানোনো হয়েছে।
সাদ আবদুল হাদি বলছেন, প্যারিসভিত্তিক একটি প্রোডাকশন কোম্পানির কাছ থেকে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে অনুষ্ঠানের এ কাজ পেয়েছেন তার মেয়ে। নবী মুসার বাজার ফিলিস্তিনের যে মন্ত্রণালয়ের হাতে অর্থাৎ টুরিজম অ্যান্ড অ্যান্টিকিটিসের কাছ থেকে এর অনুমতিও ছিল তাদের। তবে মসজিদের দেখভালের দায়িত্ব ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হাতে।
যদি এই অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া না হতো তাহলে তো এটার আয়োজনই করা যেত না
সামার আইনজীবী হাদি মাশাল
ওই স্থানের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ সম্মান বজায় রেখে ওখানে একটি অনুষ্ঠানের অনুমতি আসলেও দেয়া হয়েছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে সিএনএন। এটি দিয়েছিল পর্যটন মন্ত্রণালয়।
ডিজে সামার বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
ফিলিস্তিনের সর্বোচ্চ বিচারক মাহমুদ আর-হাব্বাসও এক টুইটে এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি টুইটে লিখেছেন, নবী মুসা মসজিদে যা হয়েছে আমি তা নিয়ে খুবই বিরক্ত.. আর আমি এখনও জানি না কার হাত দিয়ে এ পাপ হয়েছে, কিন্তু এর জন্য যেই দায়ী হোক তাকে অবশ্যই ঘৃণ্য এই কাজের উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে। কারণ, মসজিদ হলো আল্লাহর ঘর। আর মসজিদের পবিত্রতাই আমাদের ধর্মের পবিত্রতা।
ফিলিস্তিনি রেডিও স্টেশন নাস রেডিওকে দেয়া সাক্ষাতকারে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হুস্সাম আবু-আলরুব বলছেন, মসজিদের ভেতরে কোনো অনুষ্ঠানের জন্য তার মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হবে আর এমন কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। যে ঘটনা ঘটেছে তা অগ্রহণযোগ্য এবং আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থি।
ডিজে সামা ওই অঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় ডিজে। তাকে মুক্তি দেয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়াজও তুলছেন অনেকে। তার গ্রেফতারের ঘটনাকে শিল্পীর স্বাধীনতার লঙ্ঘন বলেও আখ্যায়িত করছেন অনেকে।
সামার আইনজীবী বলছেন, যদি এই অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া না হতো তাহলে তো এটার আয়োজনই করা যেত না। এখন এই অনুষ্ঠানের জন্য মানুষের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা আগে থেকে ধারণা করতে না পারাটা কার ব্যর্থতা? আমি জানি না। এটা সামার দোষ?
সূত্র : সিএনএন
এনএফ