ইয়েমেনের বিমানবন্দরে ভয়াবহ হামলা, নিহত ২০
ইয়েমেনের ঐক্যের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সৌদি আরব থেকে এডেন বিমানবন্দরে পৌঁছার পর বোমা ও বন্দুক হামলার লক্ষ্য হয়েছেন। বুধবার দেশটির নতুন সরকারের সদস্যদের বহনকারী বিমান সেখানে পৌঁছালে ব্যাপক বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণ হয়। এতে অন্তত ২০ জনের প্রাণহানি ঘটলেও প্রধানমন্ত্রী মীন আব্দুল মালিকসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা অক্ষত রয়েছেন বলে খবর দিয়েছে ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি ও কাতারের সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সৌদি আরবের গণমাধ্যম বলছে, প্রধানমন্ত্রী মীন আব্দুল মালিক ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দর থেকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এই হামলার জন্য ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিকে দায়ী করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, নতুন সরকারের সদস্যদের লক্ষ্য করে কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে হুথি।
ইয়েমেনের একটি মেডিক্যাল সূত্র বার্তাসংস্থা আল-জাজিরাকে বলেছে, বিমানবন্দরে প্রবল বিস্ফোরণে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। তবে মন্ত্রিসভার সব সদস্য অক্ষত রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সৌদি আরবের টেলিভিশন চ্যানেল আল-হাদাথে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর এডেনের প্রধান বিমানবন্দরের ভবনগুলো থেকে প্রচুর ধোঁয়া উড়ছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ ও গুলিতে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।
এএফপির একজন প্রতিনিধি এডেন বিমানবন্দর থেকে জানান, বিমানবন্দরে অবতরণকারী বিমান থেকে মন্ত্রিসভার সদস্যরা নেমে যাওয়ার পরপরই দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এসময় বিমানবন্দরে নতুন সরকারের সদস্যদের স্বাগত জানাতে উপস্থিত জনতা আতঙ্কিত হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করেন।
বিস্ফোরণের পরপরই সেখানে এলোপাতাড়ি গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে এই বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির কারণ জানা যায়নি।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেনের সরকার এবং দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা গত ১৮ ডিসেম্বর ঐক্যের সরকার গঠন করে। রাজধানী সানা এবং দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ শহর নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হুথি বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এই সরকার গঠন করা হয়।
ইয়েমেনের তথ্যমন্ত্রী মোয়াম্মার আল-এরিয়ানি বলেন, সরকারের সব সদস্য নিরাপদ আছেন। আমাদের দেশের মহৎ জনসাধারণকে আশ্বস্ত করছি যে, সরকারের সদস্যরা অক্ষত আছে। ইরান সমর্থিত হুথিদের এই সন্ত্রাসী হামলা আমাদের দেশপ্রেমিক দায়িত্ব পালন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
সৌদি আরবে নির্বাসিত ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আব্দ মনসুর আল হাদির কাছে শপথগ্রহণের কয়েকদিন পর মন্ত্রিসভার সদস্যরা দেশে ফিরে হামলার শিকার হয়েছেন। ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক জোট গঠন করে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে লড়াই চালিয়ে আসছে সৌদি আরব।
ওই বছর দেশটির রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ হুথি বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়ার পর সৌদি আরবে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট আব্দ মনসুর আল হাদি। পরের বছর থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের অব্যাহত হামলায় ইয়েমেনের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে।
পাঁচ বছরের বেশি সময়ের এই যুদ্ধে লাখ লাখ ইয়েমেনি বাস্ত্যুচুত হয়েছেন। দীর্ঘদিনের এই যুদ্ধে ইয়েমেন ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে বারবার সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘ।
এসএস