নববর্ষ উদযাপনে বিশ্বব্যাপী আরোপ করা হয় নানা বিধিনিষেধ

চলমান করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ। আর এ কারণেই নববর্ষ উদযাপনে বিশ্বব্যাপী আরোপ করা হয়েছে নানা বিধিনিষেধ। পুরনো বছর শেষে নতুন আরেকটি বছর সামনে এসেছে ঠিকই, কিন্তু সিডনি থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত কোথাও নেই উন্মুক্তস্থানে জনসমাগম, এমনকি নেই আতশবাজির ঝলকানিও।

এদিকে করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন শনাক্ত হওয়ায় ইউরোপজুড়ে নববর্ষ উদযাপনে আংশিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বর্ষবরণের আনন্দে মানুষের ঘরের বাইরে এসে উল্লাসে মেতে ওঠা ঠেকাতে রাস্তায়-রাস্তায় এক লাখ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছে ফ্রান্স। এমনকি দেশটিতে জারি করা হয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ।

এক বছর আগে শুরু হওয়া করোনা মহামারিতে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আট কোটিরও বেশি মানুষ আক্রান্ত ও ১৮ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে।

ইউরোপের কী অবস্থা

ফ্রান্সে বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) কারফিউ শুরুর সময় অর্থ্যাৎ রাত ৮টা থেকে রাস্তায় রাস্তায় কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলে দেশটির সরকার। প্যারিসের মেট্রো লাইনগুলোর অর্ধেকই বন্ধ রাখা হয়। দেশটিতে চলছে দ্বিতীয় দফার লকডাউন এবং রেস্তোঁরা, বারসহ ঐতিহাসিক স্থপনাগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে।

ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরনের সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। যার কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে এমন এলাকাগুলোর দুই কোটি মানুষকে নতুন বছরের প্রথম দিনেও ঘরে থাকতে বাধ্য করছে সরকার। দেশের সকল মানুষকে বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

নববর্ষের আগমুহূর্তে লন্ডনের বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থানরত মানুষকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আহ্বান জানায় পুলিশ। এরপরই নিস্তব্ধ হয়ে যায় লন্ডনের সব রাস্তা। তারপরও বিভিন্ন স্থানে আতশবাজি ফাটিয়ে ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপন করে লন্ডনের মানুষ।

নববর্ষের আগে বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডে জারি করা হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা। এসময় একে অপরের বাড়িতে যাওয়া নিষিদ্ধ করাসহ সকল অপ্রয়োজনীয় সকল দোকান বন্ধ এবং নিজ এলাকা থেকে তিন মাইল বা পাঁচ কিলোমিটারের বাইরে বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি।

জার্মানিতে বর্তমানে লকডাউন চলছে, চলবে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। আতশবাজি বিক্রি ও উন্মুক্তস্থানে জড়ো হওয়ার বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির সরকার।

নববর্ষের ঠিক আগমুহূর্তে অর্থ্যাৎ রাত ১০টায় ইতালিজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়। এসময় বার, রেস্তোঁরাসহ বেশিরভাগ দোকান ছিল বন্ধ। এদিকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে নতুন বছরের আগের রাতে ও নতুন বছরের প্রথম দিনে রাজধানী রোমে কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেননি পোপ ফ্রান্সিস।

নেদারল্যান্ডসেও বর্তমানে লকডাউন চলছে। জানুয়ারির ১৯ তারিখে এই লকডাউন শেষ হওয়ার কথা। আর লকডাউনের মধ্যেই রাজধানী আমস্টারডামের একটি বন্ধ স্টেডিয়ামে সীমিত পরিসরে নতুন বছরকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয়।

অপরদিকে তুরস্কেও চলছে চারদিনের লকডাউন।

যুক্তরাষ্ট্রের খবর কী?

নববর্ষের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও শহরে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে বিখ্যাত ‘মিডনাইট বল ড্রপ’ দেখতে মাত্র কয়েকজন মানুষকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তবে টেলিভিশন অনুষ্ঠানে দেশটির তারকারা বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নেন। সান ফ্রান্সিসকো ও লাস ভেগাস-সহ দেশটির বিভিন্ন শহরে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য আতশবাজি ফাটানো নিষিদ্ধ করা হয়।

এদিকে নতুন বছর উপলক্ষ্যে টুইটারে দেওয়া এক বক্তৃতায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দ্রুত আবিষ্কারের প্রশংসা করে এটাকে ‘মেডিক্যাল মিরাকল’ বলে আখ্যায়িত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এসময় ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। তবে করেনায় আক্রান্ত হয়ে সাড়ে ৩ লাখ আমেরিকান নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়ে বক্তৃতায় কিছুই বলেননি দেশটির বিদায়ী এই প্রেসিডেন্ট।

প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে কতটা প্রভাব পড়েছে?

বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় একটু আগেভাগেই নতুন বছরেকে স্বাগত জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সিডনিতে আতশবাজির উৎসব হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা উপভোগ করার জন্য বাড়ির বাইরে বের হওয়ার অনুমতি ছিল না কারও।

দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশের গভর্নর গ্লাডিজ বেরেজিকলিয়ান বলেন,‘আমরা চাই না, নতুন বছর উদযাপন করার সুযোগে ভাইরাস আবারও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ুক।’

সিডনির বাসিন্দারা মূলত টিভির সামনে বসেই নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন। তবে এখানেও একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি মানুষের জড়ো হওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে নববর্ষ উপলক্ষ্যে আলো প্রদর্শনের অনুষ্ঠান আগেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পাশাপাশি দেশটির বিভিন্ন শহরেও সীমিত পরিসরে নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। নতুন বছর শুরুর আগমুহূর্তে হাজার হাজার মানুষ উহান শহরের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হন এবং আকাশে বেলুন উড়ানোসহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান তারা।

করোনা মহামারির কারণে নববর্ষের অনুষ্ঠান বাতিল করে জাপান।

ভারতে দিল্লিসহ বেশ কয়েকটি শহরে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করে দেশটির সরকার। অন্য শহরগুলোতে বড় আকারের জনসমাগম এড়াতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

অন্যদিকে লকডাউনের মধ্যেই নিউজিল্যান্ডে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে মানুষ।

সূত্র: বিবিসি

টিএম