ভারতে সর্বোচ্চ দৈনিক আক্রান্তের রেকর্ড, মৃত্যু প্রায় চার হাজার
করোনায় দৈনিক আক্রান্তের হিসেবে নতুন রেকর্ড হয়েছে ভারতে। বৃহস্পতিবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জন। গত বছর মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বের কোনো দেশে এটি সর্বোচ্চ দৈনিক আক্রান্তের রেকর্ড।
এছাড়া এ রোগে বৃহস্পতিবার দেশটিতে মারা দেছেন ৩ হাজার ৯১৫ জন। বর্তমানে ভারতে সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার ১৬৪ জন। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
এই নিয়ে তৃতীয়বার ও টানা দ্বিতীয় দিন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়াল ভারতে। গত ৩০ এপ্রিল প্রথম ৪ লক্ষাধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন দেশটিতে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওইদিন ভারতে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ৩৫১ জন। তারপর বুধবার (০৬ মে) দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হন ৪ লাখ ১২ হাজার ৯১৮ জন, মারা যান ৩ হাজার ৯৯২ জন।
বিজ্ঞাপন
অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ২৭০ জন। তবে দৈনিক মৃত্যুর হিসেবে বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার করোনায় মৃতের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেছে। বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার সেখানে মৃতের সংখ্যা কমেছে ৮৭ জন।
চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণেই ভারতে এমন হু হু করে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। গত মার্চ থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় দেশটিতে।
মার্চের ১ তারিখ ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৫ হাজার ৫১০ জন। কিন্তু ওই মাসের শেষ দুই সপ্তাহের প্রতিদিনই দেশটিতে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখের ওপরে। এপ্রিলে এই সংখ্যা পৌঁছায় সাড়ে তিন লাখে।
করোনায় সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে ভারতের মহারাষ্ট্র ও দিল্লি রাজ্যে। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এই দুই রাজ্যে করোনায় ‘পজিটিভ’ শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ, যারা করোনা টেস্টে করাতে আসছেন, তাদের প্রতি তিনজনে একজন করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন।
সংক্রমণে লাগাম টানতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার, টানা লকডাউন চলছে দিল্লিতে। সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বৃহস্পতিবার লকডাউন আরোপের ঘোষণা দিয়েছে রাজস্থান ও কেরালার রাজ্য সরকারও।
রাজস্থান রাজ্য সরকার ১৫ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে। সেখানে লকডাউন শুরু হবে আগামী ১০ মে, চলবে ২৪ মে পর্যন্ত।
কেরালা সরকার ঘোষণা করেছে ৮ দিনের লকডাউন। আগামীকাল ৮ মে থেকে সেখানে লকডাউন শুরু হবে, ১৬ মে পর্যন্ত জারি থাকবে।
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ভারত। কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধাদের টিকা দেওয়া হয়েছে। তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে দেশের ৪৫ এবং তার অধিক বয়সী নাগরিকদের।
দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকাদান কর্মসূচি এখনও চলছে, কিন্তু এর মধ্যেই চলতি মাস থেকে তৃতীয় পর্যায়ের গণটিকাদান কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এই পর্যায়ে ১৮ বছর ও তার অধিক সবাইকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে টিকার ডোজের সংকট দেখা দেওয়ার কারণে অনিশ্চয়তায় পড়েছে তৃতীয় পর্যায়ের গণটিকাদান কর্মসূচি। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত বেশ কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিকার ডোজের স্বল্পতার কারণে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, কর্নাটক, ছত্তিশগড়সহ বিভিন্ন রাজ্যের বহু এলাকা স্থগিত রয়েছে গণটিকাদান কার্যক্রম।
মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ কোটি ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৫৯৮ জন, মারা গেছেন ২ লাখ ৩০ হাজার ১৬৮ জন।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএমডব্লিউ