মিয়ানমারে ক্ষমতাচ্যুত পার্লামেন্ট সদস্য, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভের নেতা ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়ে যে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠিত হয়েছিল, সেই সরকারকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা। 

এ সরকারের বিরুদ্ধে বোমা হামলা, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও আনা হয়েছে। জান্তা নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে এ খবর প্রচার করা হয়েছে। 

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে দেশটির সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিকে গ্রেফতার করে। এর জেরে বড় ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মিয়ানমার জুড়ে। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কয়েকশ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।  

ক্ষমতা দখলের পর থেকে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেনাশাসকরা। তাদের নেওয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে গেলে কারাদণ্ডের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।  

জাতীয় ঐক্যের এ সরকারকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আখ্যা দেওয়ার আগে অবশ্য এই সরকারই মিয়ানমার জান্তাকে সস্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছিল। চলতি সপ্তাহে এই সরকারের তরফ থেকে জনগণকে দিয়ে একটি প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। 

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল এমআরটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এই সরকারের সমস্ত কর্মকাণ্ড ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকাণ্ডগুলো এখন থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় পরিচালিত হবে।  

মিয়ানমারের সন্ত্রাসবিরোধী আইন কেবল ওই গোষ্ঠীকেই নিষিদ্ধ করে না, তাদের সাথে যে কোনো ধরনের যোগাযোগও নিষিদ্ধের আওতায় পড়বে। মিয়ানমার জান্তা এর আগে বিরোধীদের রাষ্ট্রদ্রোহেও অভিযুক্ত করেছে।    

শনিবারও মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত ৭৭৪ জন নাগরিক নিহত হয়েছে ও ৩ হাজার ৭৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  

জান্তা বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে বিক্ষোভ চলাকালে। জাতিগত বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষও বেড়েছে দেশটিতে। এসব গোষ্ঠীর অনেকগুলো কয়েক দশক ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে। এখন তারা জান্তাবিরোধী চলমান বিক্ষোভে সাধারণ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গেও বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। 

২০২০ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়; যাতে জয় লাভ করে অং সান সু চির দল। সু চি মিয়ানমানের গণতন্ত্রের জন্য কয়েক দশক ধরে লড়াই করছেন। তবে ওই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। 

সূত্র : গার্ডিয়ান।  

এনএফ