(বাঁ থেকে) ফিরহাদ, সুব্রত, মদন, শোভনদেব

পশ্চিমবঙ্গের চাঞ্চল্যকর নারদ দুর্নীতি মামলায় এবার গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্য বিধাসভার সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের নগর উন্নয়ন ও পৌরসভা বিষয়ক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমসহ তৃণমূল কংগ্রেসের চার জেষ্ঠ্য নেতাকে। এরা হলেন – মদন মিত্র, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

সোমবার সকাল দশটার দিকে কলকাতার চেতলায় ফিরহাদ হাকিমের বাসভবন থেকে তাকে গ্রেফতার করেন ভারতের তদন্তকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) কর্মকর্তারা।

সিবিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের ফিরহাদ বলেন, ‘নারদ মামলায় আমাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। বিনা নোটিসে আমাকে গ্রেফতার করা হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্পিকারের অনুমতি ছাড়াই আমায় গ্রেফতার করা হলো। আদালতে দেখে নেব।’

গত বছরের মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একদল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কদের অর্থ গ্রহণের এক চাঞ্চল্যকর ভিডিও ফুটেজ ফাঁস করে দিল্লির নারদ নিউজ ডটকম নামের একটি ওয়েব পোর্টাল।

নিউজ পোর্টালটি দাবি করে, তাদের হাতে রয়েছে এ-সংক্রান্ত ৫২ ঘণ্টার ফুটেজ। ১৪ মার্চ সেই ভিডিওটি কলকাতার রাজ্য বিজেপির কার্যালয়ে ফাঁস করে বিজেপিও।

ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-মন্ত্রীদের ঘরে ঘরে, হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে টাকা। এই স্টিং অপারেশনে যাদের বিরুদ্ধে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ এসেছিল, তারা হলেন মুকুল রায় (সাবেক রেলমন্ত্রী-২০ লাখ টাকা), সুব্রত মুখোপাধ্যায় (পঞ্চায়েতমন্ত্রী-৫ লাখ), সুলতান আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), সৌগত রায় (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), শুভেন্দু অধিকারী (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), কাকলি ঘোষ দস্তিদার (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (কলকাতার মেয়র-৪ লাখ), মদন মিত্র (সাবেক পরিবহনমন্ত্রী-৫ লাখ), ইকবাল আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ-৫ লাখ), ফিরহাদ হাকিম (পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী-৫ লাখ) এবং মহম্মদ আহমেদ মির্জা (জেষ্ঠ্য পুলিশ কর্মকর্তা-৫ লাখ টাকা)।

এই তথ্য ফাঁসের পর তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায় বলেছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ এক বড় ষড়যন্ত্র।

সে সময় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির দায়িত্বে থাকা দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং এই ভিডিও ফুটেজ ফাঁসের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিধানসভার তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও অবিলম্বে বিধানসভার নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছিলেন।

সূর্যকান্ত মিশ্র আরও অভিযোগ করেছিলেন, মানুষের টাকা লুট করেছে তৃণমূল। তাদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।

নারদকাণ্ডে অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন—মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী বর্তমানে বিজেপির ‘হেভিওয়েট’ নেতা। মুকুল রায় বর্তমানে সর্বভারতীয় বিজেপির সহসভাপতি এবং শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা।

এসএমডব্লিউ