যুদ্ধবিরতি দুই-একদিনের মধ্যেই: প্রত্যাশা হামাসের
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ‘যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার’ ঘোষণা দিলেও হামাস আশা করছে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই যুদ্ধবিরতিতে যাবে হামাস ও ইসরায়েলি সেনা বাহিনী। হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা এই আশাবাদ জানিয়েছেন।
লেবাননের টেলিভিশন চ্যানেল মায়াদিন টিভিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুক। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, উভয়পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার পক্ষে যে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি হয়েছে, তা সফল হবে।’
বিজ্ঞাপন
‘আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যেই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে পারব আমরা। পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এই যুদ্ধবিরতি হবে।’
গাজা ভূখণ্ডের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হামাস ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মধ্যে শুরু হওয়া সংঘাত গড়িয়েছে দশম দিনে। দু’পক্ষের মধ্যে চলমান হামলা-পাল্টা হামলায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২২৭ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও প্রায় দুই হাজার।
ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতকারীদের অবৈধ দখলদারিত্ব ও স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন গাজা অঞ্চলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা। তবে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, তার সূত্রপাত ঘটে গত ০৯ মে।
বিজ্ঞাপন
ওই দিন ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) রাত। ০৯ মে রাতে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) নামাজ আদায় শেষে মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা। স্বাভাবিকভাবেই তা দমাতে তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল-আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।
এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। হামাসের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
ইসরায়েল এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন , এ পর্যন্ত ইসরায়েলে প্রায় ৪ হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাসের ছোড়া রকেটে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে ১২ জন মারা গেছেন।
হামাস রকেট হামলা শুরু করার অল্প কিছু সময় পর থেকেই গাজায় ফিলিস্তিনি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী, যা এখনও চলছে।
বৃহস্পতিবারও গাজার উত্তরে হামাসের স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েল শতাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। ইসরায়েলি হামলার জবাবে হামাসও ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে রকেট ছুড়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর টানা হামলায় প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে আন্তর্জাতিক জনমত অনেকটা উপেক্ষা করেই নেতানিয়াহু সম্প্রতি জানিয়েছেন, ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত’ হামলা চালিয়ে যাবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ/জেএস