মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট কোম্পানি ফাইজার এবং জার্মানির বায়োএনটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি চালুর একদিন পর এই ভ্যাকসিনের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বলছে, যাদের কোনও ওষুধ অথবা খাবারে অ্যানাফাইল্যাক্সিস রয়েছে; তারা এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারবেন না।

ভ্যাকসিন নেয়ার পর যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের দুই কর্মীর শরীরে অ্যালার্জির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার পর এই সতর্কর্তা জারি করা হয়। মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখ সারিতে থাকা স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, বয়স্ক ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে।   

যুক্তরাজ্যের দ্য মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) বলছে, ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর অন্তত দু’জনের শরীরে অ্যানাফাইল্যাক্সিস এবং অপর একজনের শরীরে অ্যালার্জিজনিত সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। 

এমএইচআরএ’র প্রধান নির্বাহী জুন রাইন বলেছেন, কোনও ভ্যাকসিন, ওষুধ অথবা খাবারে কারও অ্যানাফাইল্যাক্সিসের ইতিহাস থাকলে ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন তিনি গ্রহণ করতে পারবেন না। 

তিনি বলেছেন, বেশির ভাগ মানুষই অ্যানাফাইল্যাক্সিসের সমস্যায় ভুগবেন না। করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষার সুবিধা ঝুঁকির বিষয়টিকে ছাড়িয়ে যাবে। আপনারা এই ভ্যাকসিনের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেন। ভ্যাকসিনটি এমএইচআরএ’র অত্যন্ত উচ্চ নিরাপত্তা, কার্যকারিতা এবং গুণমানের পরীক্ষায় উতড়ে গেছে।
শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াই অ্যানাফাইল্যাক্সিস।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বলছে, এর ফলে অনেক সময় তব্র প্রতিক্রিয়া এমনকি প্রাণহানির হুমকিও তৈরি হতে পারে। যাদের অতিরিক্ত অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদেরকে এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে এমএইচআরএ।  

ফাইজার এবং বায়োএনটেক বলছে, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরির ঘটনায় এমএইচআরএ’র তদন্তে সহায়তা করছে তারা। 

এর আগে, গত সপ্তাহে বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ফাইজার এবং বায়োএনটেকের করোনা ভ্যাকসিন গণহারে প্রয়োগের অনুমতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ), ইউরোপীয় মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) এই ভ্যাকসিনটির পরীক্ষার তথ্য-উপাত্ত এখনও মূল্যায়ন করছেন। 

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তীব্র অ্যালার্জি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এমন মার্কিনদের ফাইজারের ভ্যাকসিন দেয়া হবে না। এদিকে এই ভ্যাকসিনটি দেশের নাগরিকদের শরীরে প্রয়োগের অনুমতি দেয়ার পর কানাডার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ব্রিটেনে ভ্যাকসিন নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার ঘটনায় নজর রাখছে তারা।  

ফাইজার-বায়োএনটেক তাদের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনটি তৃতীয় ধাপের বৃহৎ পরিসরের পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে বলে জানায়। নিরাপদ এই ভ্যাকসিনের ৪ কোটি ডোজ কেনার চুক্তি সম্পন্ন করেছে যুক্তরাজ্য; যা দিয়ে দেশটির ২ কোটি মানুষকে দু’টি করে ডোজ প্রয়োগ করা যাবে।

আগামী কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে প্রথম ধাপে ৮ লাখ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। চলতি মাসে ৪০ লাখের বেশি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। 

বিশ্বে দ্রুততম সময়ে প্রথম কোনও ভ্যাকসিন তৈরির রেকর্ড গড়েছে ফাইজার এবং বায়োএনটেক। একটি ভ্যাকসিন তৈরিতে কয়েক দশক পর্যন্ত সময়ের দরকার হলেও মাত্র ১০ মাসেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের যুগান্তকরী উদ্ভাবনের মাইলফলকে পৌঁছেছে মার্কিন ও জার্মান এ দুই কোম্পানি।

সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।

এসআইএস