স্থানীয়ভাবে তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বাজারে আনার দুই সপ্তাহের মধ্যে রফতানি শুরু করবে ভারত। মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে ভ্যাকসিনের রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার যে খবর বেরিয়েছে সেটি নাকচ করে দিয়েছেন দেশটির এই কর্মকর্তা। 

বিশ্বে ভ্যাকসিনের যে চাহিদা রয়েছে তার প্রায় ৬০ শতাংশই উৎপাদন হয় ভারতে। দেশটি থেকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের রফতানি শুরুর অধীর অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ। 

জানুয়ারিতে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর প্রস্তুতি নেয়া দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ইতোমধ্যে জরুরি ব্যবহারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দু’টি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পরিকল্পনা করছে ভারত; আগামী জুলাইয়ের মধ্যে অন্তত ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করেছে দেশটি।

ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন প্রয়োগে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। অন্যান্য দেশকে করোনা ভ্যাকসিন দিয়ে সহায়তার পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।

ভ্যাকসিন বাজারে আনার দুই সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের কিছু প্রতিবেশি দেশে রফতানির অনুমতি দেয়া হবে।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা

‘এর মধ্যে কিছু ভ্যাকসিন পাঠানো হবে আমাদের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে এবং অন্যান্য কিছু চালান ভারতের সরকার যে দামে কিনবে সেই একই মূল্যে প্রতিবেশিদের সরবরাহ করা হবে।’ 

তিনি বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাকসিনের উৎপাদনকারী হিসেবে ভারত প্রতিবেশি এবং বিশ্বের অন্যান্যদের প্রতি তার অঙ্গীকারের ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন। ভারতের কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন সরকারের স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ বলেন, চলতি মাসের মাঝের দিকেই ভ্যাকসিন বাজারে আনার পরিল্পনা রয়েছে।

জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের সময় (৩ জানুয়ারি) থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভ্যাকসিন চলে আসবে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রস্তুতকারক ভারতীয় কোম্পানি সেরাম ইন্সটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদর পুনাওয়ালা রফতানি নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তা পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন।  

আগামী কয়েকমাস সেরামের ভ্যাকসিন রফতানি হবে না বলে গণমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে সেবিষয়ে সোমবার মার্কিন সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েট প্রেসকে (এপি) তিনি বলেছিলেন, ভ্যাকসিন রফতানি ও অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রিতে তার কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। 

কিন্তু মঙ্গলবার বিবিসির যোগিতা লিমায়িকে তিনি বলেছেন, তার কোম্পানিকে বিদেশে টিকাদান কর্মসূচির ভ্যাকসিন রফতানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ, সৌদি আরব এবং মরক্কোতে ভ্যাকসিন রফতানির প্রত্যাশা করছেন তিনি। 

সোমবার তিনি বলেছিলেন, তার কোম্পানি শুধুমাত্র সরকারকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারবে। প্রথম ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বিশেষ মূল্য হিসেবে প্রতি ডোজ মাত্র ২০০ রুপিতে বিক্রি করা হবে।

সেরাম ইন্সটিটিউট প্রধানের এমন মন্তব্যের পর টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে প্রাথমিকভাবে ভারতের ওপর নির্ভরশীল প্রতিবেশি বাংলাদেশ এবং নেপালে উদ্বেগ তৈরি হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, প্রথম দফায় ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্ডার দিয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব গত ডিসেম্বরে বলেছিলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই ভ্যাকসিনের প্রথম চালান দেশে চলে আসতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

করোনার উত্থান এবং বৈশ্বিক মহামারি

• ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়।

• চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ঘটে ৯ জানুয়ারি।

• ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে।

• এই ভাইরাসে বিশ্বে প্রথম প্রাণহানি ঘটে ২ জানুয়ারি ফিলিপাইনে।

• ১১ মার্চ ‌‘করোনা মহামারি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। 

পুনেভিত্তিক সেরাম ইন্সটিটিউট এবং হায়দরাবাদের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের ৭ কোটি ডোজ ইতোমধ্যে মজুদ করেছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এ দুই কোম্পানি তাদের ভ্যাকসিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছে।

মঙ্গলবার সেরাম ইন্সটিউট এবং ভারত বায়োটেকের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উভয় কোম্পানিই তাদের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বিশ্বজুড়েই সরবরাহ করবে। 

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ার পর বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ কোটি ৬৪ লাখ ৯ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৮ লাখ ৬৭ হাজার। 

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম আঘাত হানা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় অনেক ধনী দেশ ইতোমধ্যে নাগরিকদের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউয়ে বিশ্ব যখন ধুঁকছে; তখন অন্তত ৬০টি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এরমধ্যে ব্রিটেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড, মার্কিন ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক, মার্কিন মডার্না, রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনও রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি।

এসএস